
রুদ্ধশ্বাস জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ টাইগারদের
খেলা ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এদিন প্রথমে ব্যাট করে ১৯৩ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং স্কোর’ পায় জিম্বাবুয়ে, যা কিনা তাদের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া। এর আগে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে ২১৫ রান করে জেতে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। এর আগে পাঁচটি সিরিজের তিনটি ড্র হয়। দুইটি জেতে বাংলাদেশ।
১৯৪ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নাঈমকে হারিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভার দেখে-শুনে ব্যাট করলেও ব্লেসিং মুজারাবানির করা তৃতীয় ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার ওপেনার নাঈম। আউট হওয়ার আগে করেন মাত্র ৩ রান।
২০ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। পরপর দুই ছক্কায় ম্যাচে ফেরার আভাস দিলেও জঙ্গুয়ের করা ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন সাকিব। দুই ছক্কা ও এক চারে ১৩ বলে তিনি করেন ২৫ রান।
বড় রান তাড়া করতে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি পান সৌম্য। এ সিরিজে এটি তার তার দ্বিতীয়। ফিফটির পর ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সৌম্য। দলীয় ১৩৩ রানে লুক জঙ্গুয়ের বলটা তুলে মারতে গিয়েছিলেন, কিন্তু লং অফে ধরা পড়ে যান। ৬৮ রান করে সৌম্য ফেরেন সাজঘরে। ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান।
সৌম্যের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই ‘তাণ্ডব’ চালান আফিফ। ৫ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রানে করে বোল্ড হন তিনি। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হন শামীম পাটোয়ারি। টানা তিন চারে বাংলাদেশকে জয়ের কাছে নিয়ে যান তারা। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৩ রান। তবে শামীমের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। মুজারাবানির বলে চাকাভার ক্যাচে ফিরেছেন তিনি। ২৮ বল খেলে ৩৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষদিকে শামীম-নূরুলের ব্যাটে ৪ বল ও ৫ উইকেট বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই তেড়েফুড়ে খেলেন জিম্বাবুয়ে দুই ওপেনার তাদিওয়ানাসে মারুমানি ও ওয়েসলে মাধেভেরে। তাসকিনের করা প্রথম ওভার থেকে ৮ রান তোলে স্বাগতিকরা। সাইফউদ্দিনের করা দ্বিতীয় ওভারে কোনো বাউন্ডারি হলেও ৭ রান পায় জিম্বাবুয়ে। তৃতীয় ওভারে শরিফুল ১টি করে চার ও ছক্কা হজম করে মোট ১৩ রান খরচ করেন।
চতুর্থ ওভারে তাসকিনের ৬ বলে ৫টি চার মারেন মাধেভেরে। দুই ওপেনারের ‘তাণ্ডবে’ শুরুতেই এলেমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে যখন ঝড়ের বেগে উড়ছে, তখনই ওপেনার মারুমানিকে থামান সাইফউদ্দিন। নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে মারুমানিকে ফেরান টাইগার এই অলরাউন্ডার। আউট হওয়ার আগে মারুমানি করেন ২৭ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৩ রানের ওপেনিং জুটি।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হন ওয়েসলি মাধেভেরে ও রেগিস চাকাভা। মাত্র ৩১ বলে দু’জনে করেন ৫৯ রান। নাঈম-শামীমের যুগল ক্যাচে ফেরেন আগ্রাসী চাকাভা। সৌম্যের বলে উড়িয়ে মেরেছিলেন চাকাভা, বাউন্ডারির একেবারে ওপর গিয়ে সেটি ধরেন নাঈম। কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পারায় বাউন্ডারি পার হওয়ার আগে সেটি ছুড়ে দেন বাউন্ডারির ভেতরে। ছুটে গিয়ে সেটি নেন শামীম হোসেন। ২২ বলে ৪৮ রান করেন চাকাভা। গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু আসে সৌম্যর বোলিংয়ে। নিজের পঞ্চম বলে তিনি বোল্ড করেন সিকান্দার রাজাকে। খালি হাতেই ফেরেন জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়ক।
এরপর চার-ছক্কার ‘ফুলঝুড়ি’তে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি পান ওয়েসলি মাধেভেরে। দলীয় ১৪৬ রানে মাধেভেরেকে থামান সাকিব। ৩৬ বলে ৫৪ রান করে ফেরেন তিনি, ইনিংসে মারেন ৬ চার। এছাড়া ব্যক্তিগত ২১ রানে আউট হন ডিওন মেয়ার্স। শেষদিকে বার্লের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৯৩ রান করে স্বাগতিকরা। ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন বার্ল।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নেন সৌম্য সরকার। একটি করে উইকেট নেন সাকিব, সাইফউদ্দিন ও শরীফুল।
তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে ১২৬ রান করে সিরিজসেরার পুরষ্কার উঠেছে সৌম্যের হাতে।
এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজও। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়। শেষ ম্যাচে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হলেও শেষ হাসিটা হাসে বাংলাদেশ।