অস্ত্র তুলে নেয়া সেই আফগান নারী গভর্নর বন্দি হলেন তালেবানের হাতে

বিশ্ব ডেস্ক
কক্সবাজার ভিশন ডটকম
তালেবানদের প্রতিরোধে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশের চারকিন্ট জেলার সেই নারী গভর্নর সালিমা মাজারিকে আটক করেছে তালেবান। সালিমা তার জেলাকে তালেবান মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে দেশটির সরকারে মাত্র তিনজন নারী গভর্নরের একজন ছিলেন সালিমা। বালখ প্রদেশ ও তার নিজের জেলা চারকিন্টকে তালেবান মুক্ত রাখতে চাওয়া সেই সালিমা অবশেষে তালেবানের হাতে বন্দি হয়েছেন।
জেলা গভর্নরের একজন হিসেবে সামরিক নেতৃত্ব নিজ হাতে নিয়ে আফগানিস্তান তথা বিশ্ব গণমাধ্যমের মনোযোগ কাড়া ৪০ বছর বয়সী সালিমা বলতেন, ‘আমাকে কখনো অফিসে বসতে হয় এবং কখনো হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে হয়।’
মাত্র দশ দিনে তালেবান গোটা দেশ দখল করে নিলে যখন প্রেসিডেন্টসহ আফগানিস্তানের একের পর এক নেতা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন, তখনো চোয়াল শক্ত করে তালেবানের রক্তচক্ষুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হয়েছিলেন তিনি।
একের পর এক প্রদেশ যখন বিনাবাধায় তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছিল, চারকিন্ট ও বালখ প্রদেশ রক্ষায় সালিমা হাতে তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক। অন্যান্য প্রদেশ বিনা যুদ্ধে দখল করলেও চারকিন্টে সালিমা বাহিনীর কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল তালেবানদের।
উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয় ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তালেবানের বিপুল জনবলের কাছে কুলিয়ে উঠতে পারেনি সালিমার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে বালখ প্রদেশের পতন হয়। একইসঙ্গে সালিমার চারকিন্ট জেলাও দখল করে তালেবান।
চারকিন্ট কখনো জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি। নিজের শেষ শক্তি দিয়ে বালখ প্রদেশ ও চারকিন্টকে আগলে রাখার চেষ্টা সর্বদা করেছিলেন সালিমা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এই নারী গভর্নরকে বন্দি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।
দুই বছর আগে সালিমা তার জেলার সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপত্তা কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। সালিমা তার জেলার সব মানুষের মতামত নিয়ে চারকিন্টের পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চালান। এতে সরকারি কর্তৃপক্ষের ওপর বাসিন্দাদের আস্থা বাড়ে। কিন্তু তা আর টিকলো না।
সালিমা ওই সময় বলতেন, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতায় আমরা তালেবান আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছি এবং তাদেরকে চারকিন্টের বাইরে রাখতে পেরেছি।’ তখন তিনি চারকিন্টের উপকণ্ঠে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছিলেন, যাতে করে তারা আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।
অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন সালিমা। নারীদের মধ্যে তার প্রভাব ছিল বেশি। দেশে যখন তালেবানের তাণ্ডব শুরু হয় তখন দেশের মানুষ ও নারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তালেবানের কবলে পড়ার শঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন তখন।
সালিমার জন্ম ১৯৮০ সালে। সোভিয়েত যুদ্ধের সময় তার পরিবার আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অভিবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন।
২০১৮ সালে গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে ৩০ হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সালিমা। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো তার কাছে নতুন কিছু নয়। প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশপাশি প্রথম নারী হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ছিলেন।
সালিমা বলেছিলেন, ‘আমরা যদি তাদের নিয়ে না ভাবি তাদের বিরুদ্ধে এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেই তাহলে হয়তো তাদের হারানোর সুযোগ পাব না। আর সন্ত্রাসীরা জিতলে গোটা দেশে তাদের ভাবনাচিন্তাকে ছড়িয়ে দেবে। দেশে একটা অস্থিরতা তৈরি হবে।’
তালেবানদের বর্বরতার বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে দাঁড়ানোর এমন খ্যাতি সালিমার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তালেবানের কয়েকটি হামলায় বেঁচে যাওয়া সালিমা বলেন, ‘আমি ভয় পাই না। আমি আফগানিস্তানে আইনের শাসনে বিশ্বাসী।’
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।