
কাবুল বিমানবন্দরের দিকে জনস্রোত, সামরিক বিমান পাঠিয়েছে ১৫ দেশ
বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
আফগানিস্তানের কাবুল থেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও তাদের আফগান সহকর্মীদের দ্রুত সরিয়ে আনার মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করা তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরের দিকে জনস্রোত ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫ হাজার জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে। বিমানবন্দরটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। খবর বিবিসির
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার তিনদিন পার হয়েছে। একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেছেন, সেখানে অবশ্যই নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অভিযানে সহায়তা করা আফগানরাসহ হাজার হাজার মানুষ কাবুল ছাড়ার জন্য উদগ্রীব।
বিমানবন্দরের চারদিকে মোতায়েন করা তালেবান যোদ্ধারা আফগানদের কাগজপত্র ছাড়া বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে আমেরিকার পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
রোববার তালেবানদের নাটকীয়ভাবে কাবুল দখল করার ঘটনা বহু পশ্চিমা সরকারকে বিস্মিত করেছে।
ওদিকে সেখানকার ডাচ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা হচ্ছে। কারণ তারা বলেছেন, তারা যে চলে যাচ্ছেন সেটি তাদের আফগান সহকর্মীদের বলার মতো সময় পাননি।
ডাচ মিলিটারি ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্নে-ম্যারি স্নেলস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দোভাষী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য হয়তো অল্প সময়ই হাতে আছে। আমরা যদি পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সফল না হই, তাহলে দেরি হয়ে যাবে।
অন্তত ১৫টি দেশ কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে কাবুলে বিমান পাঠিয়েছে।
আমেরিকান, ফরাসি, ডাচ, জার্মান, স্প্যানিশ ও ব্রিটিশ উড়োজাহাজগুলো গত কয়েক ঘণ্টায় সেখান থেকে ছেড়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এখন বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা চলতি মাসের মধ্যেই অন্তত ৩০ হাজার জনকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে।
লোকজনের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের গুলি ছুঁড়তে হয়েছে বলে বুধবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রায় সাড়ে চার হাজার সেনা এখন বিমানবন্দরে আছে এবং আরও কয়েকশ’ সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। যত বেশি সম্ভব লোকজনকে আফগানিস্তান থেকে বের করার বাধ্যবাধকতা আমাদের আছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ হাজার জনকে সরিয়ে নেয়া।
এখনও অন্তত ১১ হাজার আমেরিকান আফগানিস্তানে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২৫ জন আমেরিকানসহ অন্তত দু’হাজার ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র বলেছে, তারা ইতোমধ্যেই তাদের নাগরিক ও কিছু আফগানকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সাতশ’ ব্রিটিশ নাগরিক ও কিছু আফগানকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত ল্যরি ব্রিস্টো বলেছেন, তারা এর গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ব্রিটিশ সাহায্য কর্মী কিট্টি শেভালিয়েন বলছেন, তিনি সরে আসার পর নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। রানওয়ে শত শত আফগানে গিজগিজ করছিল যারা কোথাও যাওয়ার আশায় ছিল।
তিনি বলেন, তিনি কতটা ভাগ্যবান সেটি তিনি বুঝতে পারেন যেখানে তার অনেক বন্ধু ও সহকর্মী এখনও আটকে আছেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নর ফরেন পলিসি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, আমরা আফগান সহকর্মীদের ফেলে আসতে পারি না এবং তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সব কিছু করছি আমরা।
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে বলে সতর্ক করে বলেছেন, ৩ লাখ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউরোপমুখী হতে পারে।
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, পরবর্তী কয়েক বছরে তারা ২০ হাজার আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে।