বাবুনগরীর দাফনের আগেই কেন হেফাজতের নতুন আমির ঘোষণা?
1 min read

বাবুনগরীর দাফনের আগেই কেন হেফাজতের নতুন আমির ঘোষণা?

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে তিন শীর্ষ নেতাকে হারাল দেশের কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে মারা যান হেফাজতের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে এই শোক সংবাদের আধাদিন না পেরোতেই বাবুনগরীর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নতুন আমিরের নাম ঘোষণা করা হয়। তাকে দাফনের আগেই কেন এমন তাড়াহুড়ো করা হলো, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে হেফাজতের অন্দরে ও বাইরে।

জানা যায়, জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর তার দাফনের স্থান নির্ধারণ ও হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচনের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় হাটহাজারী মাদরাসায় (দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম) বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১১টার দিকে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী মাদরাসার মাইকে জুনাইদ বাবুনগরীর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত আমির ঘোষণা দেন।

আমিরের দায়িত্ব পাওয়ার আগে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ছিলেন হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটিতে সিনিয়র নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্বপালন করেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরের মহাপরিচালকও তিনি।

তড়িঘড়ি করে হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে মুহিবুল্লাহর নাম ঘোষণা হতেই নানা আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে তার সমালোচক মহলে এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

তবে এতো দ্রুত তাকে দায়িত্ব দেয়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক নেতা জানান, হাটহাজারী মাদরাসা ঘিরে দলটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ কারণে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে বেছে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া হেফাজতের শুরু থেকেই তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

হেফাজত নেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার বাবুনগরীকে দাফনের আগেই হাটহাজারী মাদরাসায় জরুরি পরামর্শ হয়। সেখানে হেফাজত নেতাদের মুক্তি ও মাদরাসা খোলার কার্যক্রম যেন ঝিমিয়ে না পড়ে সেজন্য সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি দলের সিনিয়র নেতারা।

এর আগে ২০১৯ সালে কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদ ছেড়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে তার সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।

২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের যাত্রা শুরু। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেন। এক দশকেরও বেশি সময় সংগঠনটি চালিয়ে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান আহমদ শফী।

তার মৃত্যুর পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। পরের মাস ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে নূর হোসাইন কাসেমীও মারা যান। এরপর সংগঠনের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম জিহাদীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে গত মার্চে নরেন্দ্র মোদির সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার ঘটনার পর পুলিশি অভিযানে চাপে পড়ে ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আবার ৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম।

সংগঠনের নেতা ও মহাসচিব পুত্র মোরশেদ বিন নূর জিহাদী বলেন, ‘সবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুরা সদস্যরা। মুহিব্বুলাহ হুজুর এখন সবচেয়ে বেশি জ্যেষ্ঠ ও মুরুব্বি। তাই তাকেই আমির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।’

তাড়াহুড়ো করে আমিরের নাম ঘোষণা করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে ছিলেন, সবাই পরামর্শ করেছেন। একসঙ্গে থাকা অবস্থায় সবার সামনে এলানটা (ঘোষণা) হয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। আনুষ্ঠানিকতা করতে অনেক সময় লেগে যায়।’

মুহিবুলাহ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত আমির ঘোষণার জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজে জানাজা হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে তাকে দীর্ঘদিনের প্রিয় কর্মস্থল দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার গোরস্থানে চিরশায়িত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *