আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ ও ‘মদতদাতা’রা শাস্তির আওতায় আসছেন

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়েছেন ও বিদ্রোহে যারা মদত দিয়েছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি।
দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি তাদের বলেছেন, যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েছেন ও যারা তাতে সহযোগিতা বা উস্কানি দিয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে শাস্তি দিতে হবে।
আটটি বিভাগে দায়িত্বরত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতারা এখন সে তালিকা তৈরি করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি জলবায়ু সম্মেলন থেকে দেশে ফিরলে তাঁর হাতে ওই তালিকা তুলে দেয়া হবে।
এরইমধ্যে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন, তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতায় লিপ্তদের হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি দলীয়ভাবে এবারের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন। এ তালিকায় সদস্যও রয়েছেন। এর বাইরে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাত, প্রাণহানি ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে হুঁশিয়ারি এলো।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং তাদের মদতদাতা, উস্কানিদাতা নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন।
শৃঙ্খলাভঙ্গকারী এবং তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রধানের নির্দেশে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপকর্ম করলে কেউ রেহাই পাবে না। শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
দলীয় নেতারা জানান, দলীয় প্রধান বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের দিকে বেশি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কারা রয়েছেন মদতদাতাদের তালিকায়- এমন প্রশ্নে নেতারা বলেন, চার ধরণের নেতারা এই তালিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রত্যেকেই নিজেদের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গ্রুপিং করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন।
দলীয় নেতারা বলেন, অনেক মনোনয়নবঞ্চিত দলীয় সভাপতি বরাবর চিঠি লিখে আপিল করেছেন। সেখানে তারা বিস্তারিত কারণ তুলে ধরেছেন। সেসব কারণের মধ্যে আধিপত্য, গ্রুপিং ও অর্থের বিনিময়ে দলের পক্ষ থেকে নাম পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন। সবমিলিয়ে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, একজন ব্যক্তি একা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে না। এর জন্য অনেকগুলো আনুষঙ্গিকতা লাগে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পদ্ধতিটা খুব সুস্পষ্ট হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের মতে, একজন এমপি, মন্ত্রী কিংবা জেলার প্রভাবশালী নেতা, তার পছন্দের একজন ব্যক্তিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন দিতে চান। এবং সে জন্যই তিনি তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠান। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, এমপি, মন্ত্রী কিংবা ওই প্রভাবশালী নেতার পছন্দের ব্যক্তিটি মনোনয়ন বোর্ডের দ্বারা গৃহীত হয় না। তখন অন্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন বোর্ড বেছে নেয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য। তখন ওই প্রভাবশালী নেতা, এমপি বা মন্ত্রী তার পছন্দের ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করান। ওই ব্যক্তির নির্বাচনে যাবতীয় খরচ এবং অন্যান্য বিষয় প্রভাবশালী নেতা বহন করেন। যদিও ওই প্রভাবশালী নেতা, এমপি বা মন্ত্রী এলাকায় যান না বা কিছু করেন না, কিন্তু তার নিজস্ব দল, কর্মী বাহিনী, সবাইকে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় ব্যবহার করেন। ফলে ওই বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেন। আর এই পরিস্থিতির মধ্যদিয়েই নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয় আওয়ামী লীগ।
যে সব স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, সে সব স্থানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছেন যে মন্ত্রী, এমপি বা প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ মদত ছিল তাদের জয়ের পিছনে। সেখানে তারা আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে এমপি লীগ বা মন্ত্রী লীগ কিংবা প্রভাবশালী নেতার লীগকে শক্তিশালী করেছেন এবং এ কারণেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ কারণেই বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের এ তালিকা প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিল দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। আর এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি এই তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
মনোনয়ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দলের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন দলের পদধারী অনেক নেতা। বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া, ভালো পদ না পাওয়ার হুঁশিয়ারিতেও কাজ হচ্ছে না।
দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ১১ শতাধিক। এরমধ্যে অনেকে দল মনোনীতদের চেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রতীক বরাদ্দ পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপিল করেছেন। সবমিলিয়ে বিদ্রোহী নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিদ্রোহীদের কারণে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন নেতারা।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ, বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলীয় পদ-পদবি এবং মনোনয়ন না পাওয়া, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে কোনো নোটিশ ছাড়াই দল থেকে বহিষ্কার, তৃণমূল থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে কেন্দ্রে নাম পাঠানো এত সব উদ্যোগ নিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে সবার মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা, কেন্দ্রে নাম পাঠানোর সময় স্বজন পোষণ, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের মাঠে না থাকা এবং দলের চেইন অব কমান্ডের অভাবের কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এগুলোই বিদ্রোহী প্রার্থী না ঠেকাতে পারার অন্যতম কারণ।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে। তারপরেও বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।