
ধীরে ধীরে কথা বললেন ‘দুর্বল’ খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর
ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ভাসানী পরিবারের পাঁচ সদস্য শুক্রবার হাসপাতালে দেখতে গেলে তিনি দোয়া চান। মওলানা ভাসানীর মেয়ে মাহমুদা খানম ভাসানী বলেন, খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে কথা বলে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি খুবই দুর্বল।
জানা গেছে, এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। রক্তক্ষরণই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা।
চিকিৎসকদের ভাষায়- পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণই তাঁকে বেশি ভোগাচ্ছে।
তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামকে’ প্রতি মুহূর্তই সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন। তাঁর শরীরে যখন যে সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, তখনই সেই চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে তাঁর জন্য এখন উন্নত চিকিৎসার (অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট) কোনো বিকল্প নেই। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই রয়েছেন।
চিকিৎসক সূত্র মতে, মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শে নিউরো মেডিসিন পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে শুক্রবার হাসপাতালের নিচতলায় নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড মলিকিউলার ইমেজিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আবারও তাকে চতুর্থ তলার সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপর এক চিকিৎসক জানান, বৃহস্পতিবার তাঁর যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু রিপোর্ট ভালো আসেনি। অন্য পরীক্ষাগুলোর রিপোর্টের জন্যও তারা অপেক্ষা করছেন। তাঁর দেহে খনিজ অসমতা পূরণের চেষ্টা চলছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ হিসেবে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। লিভারের জটিলতায় তাঁকে রক্ত দিতে হচ্ছে। অক্সিজেন প্রদানও অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার জীবন-সংকটের কথা বিবেচনায় নিয়ে সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের প্রতি আবারও অনুরোধ জানিয়েছেন। একই দাবি জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনও একই দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে একই দাবিতে ফের মশাল মিছিল হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চিকিৎসকরা তাদের জানা চিকিৎসা-বিদ্যার সবই প্রয়োগ করছেন। যখনই যা দরকার তাই প্রয়োগ করছেন। রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হলে রক্ত দিচ্ছেন। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, এ দেশে তাঁকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার পরও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তাঁকে বাঁচাতে দ্রুত বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। এ চিকিৎসা আছে মাত্র তিনটি দেশে। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য আর জার্মানি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকারের সুমতি হবে এবং অনতিবিলম্বে তারা মানবিক কারণে হলেও বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসা লাভের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান শুক্রবারও সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালে ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রয়োগ শেষ। এখন তারা ‘ম্যাডামকে’ ‘ক্লোজ মনিটরিংয়ে’ রেখেছেন। বারবার বিদেশে নিয়ে ‘অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের’ পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় প্রার্থনা
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য বিএনপি শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত কর্মসূচি পালন করেছে। একই সঙ্গে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় স্ব স্ব ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনার আয়োজন করেছেন। তারা সবাই নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তিসহ আরোগ্য কামনা করে দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুয়ায়ী শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি।
দোয়া শেষে গেটের বাইরে দেয়া বক্তৃতায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দিতে আইনি কোনো বাধা নয়। বাধা হচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, আইনের কথা বলে লাভ নেই। আইনজীবীরা বলছেন, আইনে কোনো বাধা নেই। একমাত্র বাধা সরকার। একটি বানোয়াট মামলায় এ সরকার গত তিনবছর ধরে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে রেখেছে। আজকে তিনি মৃত্যুপথযাত্রী। তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ এবং দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ সরকার এত নির্দয়, তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দেশনেত্রীকে শেষ করে দিতে চায়। এ জন্য তাঁকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছে না।
ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা নেছারুল হকের পরিচালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বরিশালে জুমার নামাজের পর শতাধিক মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়েছে। নড়াইলে বাদ জুমা শহরের দুর্গাপুর মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণে দোয়া মাহফিল হয়। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের জামাইল মধ্যপাড়া জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে ভাসানী পরিবারের পাঁচ সদস্য
বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পরিবারের পাঁচ সদস্য। পরে মওলানা ভাসানীর মেয়ে মাহমুদা খানম ভাসানী জানান, খালেদা জিয়া সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাসানীর পরিবারের পাঁচ সদস্য খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। তাঁরা ৩০ মিনিটের মতো হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় মাহমুদা খানম ভাসানী খালেদা জিয়াকে দেখতে তাঁর কেবিনেও যান।
সেখান থেকে এসে তিনি জানান, খালেদা জিয়া খুব ধীরে ধীরে কথা বলে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি খুবই দুর্বল।
মাহমুদা খানম ভাসানী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে দ্রুত বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানান।
মওলানা ভাসানীর নাতি হাবিব হাসান, মাহমুদুল হক, ভাসানীর বড় মেয়ে রিজিয়া ভাসানী ও নাতনি সুরাইয়া সুলতানাও একই দাবি জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে নেই -মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার যে ব্যবস্থাপনা দরকার তা বাংলাদেশে নেই। খালেদা জিয়া এখন তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন। ডাক্তার বলেছেন, কয়েকদিন ধরে খুবই কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোনার বাংলা পার্টির ১২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যে যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসা ব্যবস্থা দরকার, তা বাংলাদেশে নেই। এর জন্য তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া দরকার, যা এ সরকার দিচ্ছে না।
মিরপুরে রিজভীর নেতৃত্বে মশাল মিছিল
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে রাজধানীতে ফের মশাল মিছিল হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে শুরু হয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বরের কাছাকাছি গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। কাফরুল এলাকার নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।