কঠিন সমিকরণে হলদিয়া পালং’র ভোট, ইমরুলের ‘ঘোড়া’র পাল্লা ভারি

UP Election

নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া (কক্সবাজার)
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বহুল আলোচিত হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পুণনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম ও ঘোড়া প্রতীকের ইমরুল কায়েসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫নং ওয়ার্ডে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়। ৩০ নভেম্বর স্থগিত কেন্দ্রে পুননির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

২৮ নভেম্বর রাতে প্রচারণা শেষ হয়। উভয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় একপক্ষ অন্যপক্ষকে বাধা ও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই এলাকায় চরম উত্তেজনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, গতবার ভোট ডাকাতির সময় আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। পুনরায় ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটলে প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে না কেউ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সাধারণ সচেতন ভোটাররা।

হলদিয়া পালং এলাকার ভোটার জাফর আলম বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহ আলম ৫ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভোটে নির্বাচিত হননি। মন্ত্রী পরিষদের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ছোট ভাই হিসেবে তিনি প্রভাব ও ক্ষমতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি ভোটে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু চেয়ারম্যান ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এনে বিতর্কিত কথা বলা এবং তার স্ত্রী প্রচারণার সময়ে ভোটারদের সাথে অশোভন আচরণের ফলে তিনি এখন চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় পড়েছেন।

তিনি বলেন, সেইবার তিনি আমাদের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। তাই এবার আর সেই সুযোগ তিনি পাবেন না। গতবার যেনতেনভাবে তিনি তার ফলাফল হাতিয়ে নিতে সক্ষম হন।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও হলদিয়া ৫নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ভোট বানচালের অপচেষ্টা চালানো হয়। এবার স্থানীয় ভোটার ও উপজেলা প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে দুর্বৃত্তরা ভোট ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয়।

৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য স্থগিত হওয়া কেন্দ্রের নির্বাচনে আবারো বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফলাফল পাল্টে দেয়ার ব্যাপক আশংকা রয়েছে। এমন যদি ঘটনা ঘটে তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ হবেন প্রশাসন। তাই আমজনতার চাওয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষতার পরিচয় দেবেন। এই কেন্দ্রটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ।

ভোটার জয়নাল আবেদিন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ আলমের স্ত্রীসহ মহিলা টিম ৫নং কেন্দ্র এলাকায় ভোটের প্রচারণা করতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান। এতে অনাখাংকিত ঘটনা ঘটে। ভোটারদের গায়ের ওপর হাত তোলেন স্বয়ং চেয়ারম্যানের স্ত্রী। মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এই ঘটনা। পরে তাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটে বলে তারা দাবি করেন।

এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের ভোট কমেছে বলে জানালেন জয়নাল আবেদিনসহ অধিকাংশ ভোটার।

স্থানীয় হেলাল উদ্দিন বলেন, ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে সিল মেরে আমাদের ভোটাধিকার হরণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলে তার জবাব সাধারণ ভোটাররা এবার ভালভাবেই বুঝিয়ে দেবেন। আশা করা যায়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রয়েছে। ফলে জনগণ একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছেন।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, হামলা-মামলা-হুমকিতে আবারো উত্তপ্ত হলদিয়া পালংয়ের নির্বাচনী মাঠ। বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আতংকিত সাধারণ ভোটাররা। প্রচারণা শেষ হওয়ায় নেতারা ব্যস্ত মেরুকরণে। সচেতন মহলের প্রত্যাশা সংঘাতমুক্ত নির্বাচন। সাংবাদিকসহ প্রশাসন রয়েছেন গভীর পর্যবেক্ষণে।

হলদিয়া পাতাবাড়ির ভোটার লিয়াকত, শফিকুর ও সব্বির আহমদ বলেন, হলদিয়া ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ঘাটি। এখানে নৌকার ভোটার বেশি। বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। ভোটাররা তার প্রতিদান দেবেন। তিনি আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।

এদিকে হলদিয়া পালং ৫নং ওয়ার্ডের ভোটার এবং এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন, আগামী ৩০ নভেম্বর বহুল আলোচিত নলবনিয়া কেন্দ্রে ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের সার্বিক সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।

এলাকাবাসী মনে করেন, ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে ইমরুল কায়েস (ঘোড়া প্রতীক) বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।