শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ : থানায় বিচার না পেয়ে আদালতে বাবা
1 min read

শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ : থানায় বিচার না পেয়ে আদালতে বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের ৩ দিন পর ভিকটিমের বাবা মামলা করলেন আদালতে। পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার নিয়েও ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত ওই গৃহবধূর নাম হাজেরা বেগম (২০)। ২৬ অক্টোবর পেকুয়া থানা পুলিশ ওই নারীর মরদেহ স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।

এ নিয়ে পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। সুরতহাল রিপোর্ট শেষে মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

নিহত গৃহবধূ হাজেরা বেগমের পরিবারের দাবি, মেয়েটিকে নিষ্টুরভাবে পিটিয়ে ও শ^াসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় এজাহার দিয়েছেন। তবে পুলিশ সেটি আমলে নেননি।

শ^শুর বাড়ির লোকজন বলছেন, হাজেরা বেগম আত্মহত্যা করেছেন। স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তাদের। কিন্তু পিতাসহ নিহতের স্বজনরা বলছেন, আত্মহত্যা নয়, তাদের মেয়েকে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে।

তারা জানান, হাজেরা বেগম ও স্বামী মোহাম্মদ খোকনের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। খোকন অপর এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি স্ত্রী হাজেরা বেগম আঁচ করতে পেরেছিলেন। মূলতঃ এ নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দিয়েছিল।

তাদের দাবি, এক মাস আগে যৌতুকের দাবি নিয়ে স্ত্রী ও স্বামীর মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় স্ত্রীকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয় স্বামী। এ নিয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীকে সংসারে ফেরান স্বামী।

নিহতের পিতা বলেন, ২৬ অক্টোবর দুপুরে আমার মেয়েকে তারা নিষ্টুরভাবে পিটিয়ে ও স্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করতে মৃতদেহ বাড়ির ছাদের আড়াই টাঙ্গিয়ে দেয়।

তার দাবি, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় পুলিশ দেখেছে আমার মেয়ের শরীরে ব্যাপক নির্যাতনের চিহ্ন। আমাকে স্থানীয়রাও মেরে ফেলার খবর দেয়। লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি হাসপাতালে মেয়ের লাশ ফেলে তারা পালিয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত, আমার মেয়েকে হত্যা করেছে তারা।

নিহত হাজেরা বেগমের ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বলেন, অনেকবার নির্যাতন করেছে আমার বোনকে। শালিশী বৈঠকে স্বামী মুচলেকা দিয়ে তাকে সংসারে নিয়ে যান। ঘটনার কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়ি থেকে শ^শুর বাড়ি গিয়েছিল। যৌতুক ও পরকীয়া সম্পর্কের কারণে বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদশাহ মিয়া বাদী হয়ে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলার নালিশী অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে হাজেরার স্বামী খোকনকে প্রধান আসামিসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম আদালত সেটি আমলে নেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ অক্টোবর পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বকসুচৌকিদারপাড়া থেকে গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত গৃহবধূর নাম হাজেরা বেগম (২০)। তিনি ওই এলাকার মোহাম্মদ খোকনের স্ত্রী।

মামলার আর্জি সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর হাজেরা বেগমের সাথে বকসুচৌকিদারপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে খোকনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সংসার কিছুদিন সুখে ছিল।

হাজেরার বাবা বাদশা মিয়া বলেন, পরকীয়া সম্পর্ক ও যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম জানান, মামলার কপি এখনও হাতে আসেনি। মামলা করা হলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *