একসঙ্গে শেষকৃত্য হলো সেই পাঁচ ভাইয়ের
1 min read

একসঙ্গে শেষকৃত্য হলো সেই পাঁচ ভাইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া (কক্সবাজার)
বিসিবিনিউজ ‍টুয়েন্টিফোর ডটকম

কক্সবাজারের বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ট্রাকচাপায় নিহত পাঁচ সহোদরের শেষকৃত্য শেষ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অনতিদূরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি শ্মশানে পৃথক পৃথক চিতায় একে একে তাদের শেষকৃত্য করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রথমে অনুপম শীলের (৪৮) শেষকৃ্ত্য হয়। পরে একে একে নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) এবং সবার শেষে নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ট সরণ শীলের (৩৬) শেষকৃত্য হয়।

বিকেলে সাড়ে ৫টায় পাঁচ ভাইয়ের শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। হিন্দু মুসলিম মিলিয়ে উপজেলার তিন শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এক শোকাবহ পরিবেশের মধ্যদিয়ে ৫ ভাইকে চিরবিদায় জানানো হয়।

এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া মিনি ট্রাকটি হাইওয়ে পুলিশ ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল সড়ক থেকে আটক করেছে। বিকেলে ট্রাকটি আটক করা হয়।

মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন বলেন, বিকেলে ওই এলাকা থেকে পেঁয়াজ ও আলুভর্তি মিনি ট্রাকটি আটক করা হয়।

পিকআপের চাকায় পিষ্ট আপন ৪ ভাই, মৃত্যুযন্ত্রণায় আরও ৩ ভাই-বোন

পুলিশ জানায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় ওই পাঁচ ভাইকে চাপা দিয়ে রংমহল এলাকার সড়কে ট্রাকটি ফেলে চালক হেলপার পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকা থেকে ট্রাকটি আটক করে হাইওয়ে থানা হেফাজতে নেয়া হয়। তবে এখনও ট্রাকটির চালক ও মালিককে শনাক্ত করা যায়নি। এই ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান ডুলাহাজারার রিংভং হাসিনাপাড়ার বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র শীল। হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে তাকে সৎকার করা হয় এবং সৎকার পরবর্তী আচার পালন করতে শুরু করেন সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে।

মৃত্যুর ১১ দিনে হওয়ার কথা ছিল বাবার শ্রাদ্ধ। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ভোরে আট ভাইবোন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারছিলেন। ঠিক তখনই তাদের চাপা দেয় ওই ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় চার ভাইয়ের।

বাবার শ্রাদ্ধের আগেই পরপারে ৪ ছেলে, আহাজারি আর শোকে স্তব্ধ পরিবার

এ সময় গুরুতর আহত হয় অপর দুই ভাই ও দুই বোন। তাদের উদ্ধার করে কাছের খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে বেলা ১১টার দিকে এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর পাঁচ ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হলে তা দেখে যেন পাথর হয়ে যান ১১ দিন আগে স্বামী হারানো মানু বালা শীল (৬০)।

দুপুরে মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে সারি করে রাখা হয়েছে অনুপম, নিরুপম, দীপক, চম্পক ও স্মরণ শীলের মরদেহ। পাশে তাদের স্ত্রীরা বিলাপ করছেন। ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা ঢুকরে কাঁদছে। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন। সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই। এসবের মধ্যেই যেন ‘পাথর’ হয়ে বসে আছেন মানু বালা। চোখে পানি নেই। কোনো কথা বলছেন না, নড়াচড়াও করছেন না।

এতটাই শোকাহত যে কান্না করতেও যেন ভুলে গেছেন মানু বালা শীল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *