তালিকায় আমলা-আইনবিদই বেশি, আছেন অখ্যাতরাও
1 min read

তালিকায় আমলা-আইনবিদই বেশি, আছেন অখ্যাতরাও

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার কমিশনার পদে ৩১৫ জনের নামের প্রস্তাব এসেছে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির কাছে। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ২১টি, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি তাদের নাম দিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সোমবার রাতে প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা জানায়নি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, তারা ৩২২ জনের নাম পেয়েছে। তবে প্রকাশিত তালিকায় অন্তত সাতজনের নাম দু’বার করে রয়েছে। এ হিসাবে ৩১৫ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন সাবেক আমলা, ৮৯ জন। এরপরই রয়েছেন আইন পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরা। সাবেক দুই প্রধান বিচারপতিসহ ১৫ বিচারপতির নাম এসেছে। রয়েছে ২৩ জন বিচারকের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ২৬ আইনজীবীর নামের প্রস্তাবও এসেছে। সশস্ত্র বাহিনীর ২৭ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শকসহ ৯ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। তবে অপরিচিত ও অখ্যাত বেশ কয়েকজনের নামও তালিকায় দেখা গেছে।

সার্চ কমিটির সদস্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের নামও রয়েছে তালিকায়। সাবেক দুই কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ও মোহাম্মদ আবদুল মোবারকের নাম এসেছে। জেসমিন টুলি, খন্দকার মিজানুর রহমানসহ নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সাবেক কর্মকর্তা রয়েছেন তালিকায়। নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পেতে যুগ্ম সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করে আলোচনার জন্ম দেয়া আবুল কাশেমের নামও আছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্ত্রী সাবেক অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের নাম রয়েছে তালিকায়। জাপা তার নাম প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে।

তালিকার অধিকাংশ নাম নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির। তবে মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু, কবি ফিরোজা আক্তার, ফ্রিল্যান্স পরামর্শক জ্যোতি বিকাশ বড়ূয়া, প্রবাসী মজিবর রহমান মজিব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বরগুনা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালিব মিয়া, ‘ট্যুরিজম স্কলার’ মো. রাফিউজ্জামান, সম্পাদনা পরামর্শক মোহাম্মদ রাফিউজ্জামানসহ কয়েকজন অখ্যাত ব্যক্তির নামও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, সার্চ কমিটি সবার পরামর্শ মেনে নাম প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ থাকবে না।

তবে নির্বাচন গঠন প্রক্রিয়া বর্জন করা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি কখনও সার্চ কমিটি নিয়ে আগ্রহী ছিল না। নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার বিএনপির মূল দাবি। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আরেক বর্জনকারী দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নামের তালিকা প্রকাশে মন্তব্য করার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠন হবে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত মনোনয়নে। তাই এতে নতুনত্ব কিছু নেই।

ক্ষমতাসীন জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এই নামের তালিকা প্রকাশ করা তাদের দাবি নয়। সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতিকে পাঠাবে, ওই তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়া বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বর্তমান প্রধান বিচারপতির ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথসহ ১৫ জনের নাম রয়েছে তালিকায়।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা ও মোহাম্মদ শফিউল আলমের নাম প্রস্তাবে রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, নজিবুর রজমান, মোহাম্মদ আবদুল করিমের নাম এসেছে।

সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ, জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, শহীদুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ খন্দকারের নাম রয়েছে তালিকায়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী ও গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরীর নাম এসেছে প্রস্তাবে। রয়েছেন এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মোস্তফা কামাল উদ্দীন, অশোক মাধব রায়, আবুল মালেক, জিল্লার রহমান, কাজী হাবিবুল আউয়াল, আকতারি মমতাজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী সাবেক সচিব কামরুন নাহারের নাম রয়েছে।

তালিকায় পাঁচজন সাংবাদিকের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান, ড. বিনায়ক সেন, ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নাম রয়েছে।

তালিকায় নাম থাকা আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিকের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশ মন্দের ভালো। তবে প্রত্যাশা থাকবে, কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশ করা হবে। যদি দেখা যায়, বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল তার আদর্শে বিশ্বাসী বা অনুগতদেরই নাম প্রস্তাব করেছে, তাহলে উপসংহার হতো, বামপন্থি দলটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না; বরং তারা এমন নির্বাচন কমিশন চায়, যা তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করবে।

খসড়া তালিকায় নিজের নাম আসা এবং দায়িত্ব পেলে গ্রহণ করবেন কিনা- এ প্রশ্নে শাহ্‌দীন মালিক বলেন, ‘আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে কেউ নাম দিয়ে থাকতে পারে। দায়িত্ব পেলে বা এমন পরিস্থিতি সামনে এলে তখন ভেবে দেখা যাবে।’

নাম থাকলেও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তালিকায় যেন তার নাম না থাকে। তিনি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেতে আগ্রহী নন। কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সুজন।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের নাম রয়েছে তালিকায়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতাসহ ৪৬ শিক্ষাবিদের নাম রয়েছে। পাশাপাশি ডা. কাজী দ্বীন মুহাম্মদসহ আট চিকিৎসকের নাম রয়েছে।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের নাম রয়েছে তালিকায়। এফবিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলালিল জামিয়াতুল কওমিয়ার চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানসহ তিন আলেমের নাম রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আগে জানিয়েছিল ২৪ দল নাম দিয়েছে। তবে সোমবার জানায়, ২১টি দল নাম দিয়েছে। বিএনপিসহ নাম না দেয়া ১৮ দলকে তালিকা দিতে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। যদিও দলটি রোববার জানিয়েছিল নাম দেবে না।

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ সোমবার শেষ হয়েছে। নতুন কমিশন গঠন হতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। আজ মঙ্গলবার আট জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। তারা হলেন নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল ও শওকত মাহমুদ।

জানা গেছে, ইসি গঠনে রাজনৈতিক দল থেকে এসেছে ১৩৬ জনের নাম। পেশাজীবী সংগঠন দিয়েছে ৪০টি নাম। ই-মেইলে এসেছে ৯৯ জনের নাম আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রস্তাব করেছেন ৩৪ জন। এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও অন্তত ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, তাদের নির্বাচন কমিশনে নিয়ে আসা হবে বলে বিশ্বাস করি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি সার্চ কমিটির কার্যক্রমেই বিরক্ত। প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশ করলেও প্রস্তাবকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এতে আমরা ধরেই নিতে পারি- এ তালিকার মধ্যে সার্চ কমিটি নিজেরাই অনেক নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যে ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে, সেটাও প্রকাশ করা হবে বলে শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী যাদের দেখতে চাইবেন, তারা ওই ১০ জনের মধ্যেই থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *