রুশ আগ্রাসন, রক্তাক্ত ইউক্রেন

রুশ আগ্রাসন, রক্তাক্ত ইউক্রেন

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

কয়েকদিন ধরে নানা নাটকীয়তা চলছিল। ছিল শঙ্কাও। সবশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা শুরু করে দেশটি। তিন দিকে ঘিরে রুশ বাহিনী আকাশে যুদ্ধবিমান, স্থলে ভারী যান আর নৌপথে রণতরী থেকে হানা দিতে দিতে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয়।

সকালের দিকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে কিয়েভ সেনারা। তবে রাশিয়ার সর্বগ্রাসী বাহিনীর সামনে দাঁড়াতে পারেনি তারা। রাত ১২টার দিকে রুশ বাহিনী কিয়েভের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। রাজপথ দখলে নিয়ে টহল দেয় রুশ ট্যাঙ্ক। রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এখন কিয়েভের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে। এ নিয়ে কয়েকমাস ধরে পাল্টাপাল্টি হুমকি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও কূটনৈতিক তৎপরতার পর বৃহস্পতিবার ভোরে রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনবাসে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’র ঘোষণা দেন ভদ্মাদিমির পুতিন। এরপরই আক্রমণ শুরু হয়।

এতে আতঙ্কে দিকবিদিক ছোটাছুটি করেন ইউক্রেনীয়রা। এরই মধ্যে খবর আসে শতাধিক মৃত্যুর। রুশ বিমান ভূপাতিতের দাবিও করে তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

পুতিন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় অবিলম্বে আমাদের এমন পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে। দোনবাসের স্বাধীন দুটি প্রজাতন্ত্র আমাদের কাছে সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করেছে। জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আমি সেখানে একটি বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

পরে পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এটার কোনো বিকল্প ছিল না। পাশাপাশি ইউক্রেন ও পশ্চিম রাশিয়ার আকাশপথ বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।

রাত ১টায় আলজাজিরা জানায়, ইউক্রেনের সম্পূর্ণ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দিয়ে পুরো আকাশপথ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া।

দিন শেষে পুতিন বলেন, প্রথম দিনের অভিযান সফল হয়েছে।

পুতিনের ঘোষণার পরপরই স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু হয়। রাশিয়ার সামরিক যানগুলো উত্তরে বেলারুশ ও দক্ষিণে ক্রিমিয়া থেকে শুরু করে একাধিক দিক দিয়ে প্রবেশ করে। পূর্বদিকের খারকিভ ও লুহানস্ক অঞ্চল দিয়েও রুশ সেনারা আক্রমণ করেছে। স্থলযান নিয়ে এগোনোর আগে রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করছে। মূলত ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তারা।

রাত ৯টায় পাওয়া খবর অনুযায়ী, লুৎস্ক, কিয়েভ, ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক, ওডেসা, খেরশান, দিনিপ্রো, খারকিভ, মারিউপোল, খ্রামাটোরস্ক শহরে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিমানঘাঁটি হোস্টোমেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। রাত ১১টার দিকে তারা রাজধানীর কিয়েভের উপকণ্ঠেও ঢুকে পড়তে শুরু করেছে।

এরপরই মস্কোর ওপর সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়ার প্রধান প্রধান ব্যাংকের সম্পদ ফ্রিজ করা এবং উচ্চ প্রযুক্তি-সংক্রান্ত পণ্যের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইউক্রেনের আকাশে উড়ছে যুদ্ধবিমান। কিয়েভসহ বিভিন্ন শহর গোলার গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ক্ষণে ক্ষণে বিস্ম্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত মানুষ দিকবিদিক ছুটছেন। রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইনও দেখা যাচ্ছে। অনেকে রাজধানীর পাতাল রেল স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে বন্দরনগরী ওডেসার বাইরে অবস্থিত সামরিক ইউনিট পোডিলস্কে রুশ হামলায় ছয়জন নিহত ও সাতজন আহত এবং খেরশান অঞ্চলে তিন সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া মারিউপোল শহরে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১টি এয়ারড্রোমসহ মোট ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।

দোনবাসের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি ঘোলাটে। বুধবার রাতেও লোকজন শহরের রাস্তায় ছিল, তারা ইউক্রেনের পতাকা উড়িয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোরে যে বিস্ম্ফোরণের শব্দ প্রথমে শুনবে, তা তারা কল্পনাও করেনি।

বৃহস্পতিবার কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও বিস্ফোরণের পর সকালটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে পড়ে চারপাশ। তবে রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন ছিল।

বিবিসির খবরে বলা হয়, কিয়েভে সকালে দূর থেকে আসা পাঁচ থেকে ছয়টি ‘বিস্ম্ফোরণে’র শব্দ শোনা গেছে। কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দরেও গুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে কিয়েভে বড় ধরনের গোলাবর্ষণের পরই শহর ছেড়ে পালাতে থাকেন বাসিন্দারা। সবাই শহর ছাড়ার চেষ্টা করায় এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি দেশটির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, তারা বোমার হাত থেকে বাঁচতে বেজমেন্ট ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ছুটছেন।

এমন পরিস্থিতিতে রুশ বাহিনীকে রুখতে পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে ইউক্রেনের বাহিনী। দেশটিতে সামরিক শাসন জারি করে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় সবাইকে অস্ত্র তুলে নিতে হবে।

এদিকে ইউক্রেনে এখনই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন জোটের প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, হামলা শুরুর পর আগ্রাসী বাহিনীটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। খারকিভের কাছে একটি রাস্তায় রাশিয়ার চারটি ট্যাঙ্ক তারা ধ্বংস করেছে। লুহানস্ক অঞ্চলে একটি শহরের কাছে ৫০ রুশ সেনাকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে বিমান ভূপাতিতের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।

এছাড়া চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলের সাবেক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় দখল নিতে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। খেরশানের স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আক্রমণে তারা কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন তুমুল যুদ্ধ চলছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেনে হাজারো পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। তবে পরে স্বেচ্ছায় সেগুলো নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগ নেয় কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট সমঝোতা করে সব পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, দেশরক্ষায় যারা অস্ত্র চাইবে তাদের তা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে শান্ত থাকতে হবে। পারলে ঘরে থাকুন। আমরা কাজ করছি, সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। অবশেষে ইউক্রেন জয়ী হবে। এরই মধ্যে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে কিয়েভ করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কিয়েভজুড়ে জরুরি সতর্ক ঘণ্টা বাজার পর ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা ও বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে তুমুল গোলাবর্ষণ শুরু হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পুতিন আক্রমণের নির্দেশ দেয়ার পর ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

কিয়েভ বলছে, তার দেশের অবকাঠামো ও সীমান্তরক্ষীদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে মস্কো। এরই মধ্যে ইউক্রেনজুড়ে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেকসি অ্যারেস্টভিচ বলেছেন, এ পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার রাত ৯টা) রাশিয়ার হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় বহু আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের স্থানগুলো নিশ্চিত করে জানাননি তিনি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও নিরপেক্ষ সূত্রে এসব তথ্য যাছাই করতে পারেনি।

ইউক্রেনে তিন পাশ থেকে আক্রমণের পাশাপাশি আজভ সাগরে অবরোধ দিয়েছে রাশিয়া। এর মাধ্যমে দেশটির নৌপথও আটকে দিয়েছে তারা। ইউক্রেন ঘিরে যখন এভাবে চতুর্মুখী হামলা হচ্ছে, তখন বিশ্বজুড়ে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়াকে ঠেকাতে আলোচনা করছেন। দেশে দেশে নিন্দা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন নেতারা।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমরা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। এই হামলাকে অন্যায্য ও উস্কানিহীন আক্রমণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মস্কোর এই সামরিক অভিযানের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে বিশ্ব।

বাইডেন বলেন, এই আক্রমণে যে মৃত্যু ও ধ্বংস হবে, তার জন্য কেবল রাশিয়াই দায়ী থাকবে। মস্কোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা এখন ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে।

পুতিন রক্তপাতের পথই বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, উস্কানিহীন এই আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে সম্মিলিতভাবে জবাব দেবে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্ররা।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এখনই এই সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনীয় ও তাদের সহযোগীদের পাশে থেকে কাজ করবে প্যারিস।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুতিনকে ফোন করে কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। আর ইউরোপের অন্যতম নেতা ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি রুশ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এই যুদ্ধকে অন্যায্য উল্লেখ করেন তিনি।

এই সামরিক আগ্রাসনের জন্য বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলায় বড় নাড়া দেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ইউক্রেনীয়দের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

পুতিনের ঘোষণার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের নিন্দা জানিয়েছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের কৌশলগত মিত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, এভাবে হামলা চালিয়ে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

ইউক্রেনের হামলা শুরুর পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন, মানবতার দোহাই- আপনার সেনাদের রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিন।’

এ সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী হবে।’

তবে এ হামলার জন্য ন্যাটোর উস্কানিকে দায়ী করেছে ইরান।

অন্যতম সুপারপাওয়ার চীন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই অভিযানে রুশ বাহিনীকে সামরিক সহায়তা দেয়ার দরকার পড়বে না বেইজিংয়ের। ইউক্রেনে চীনের দূতাবাস সে দেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে।

এই হামলাকে মাখোঁ ইউরোপের ইতিহাসের দিক পরিবর্তনকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে এই মহাদেশের ওপর। এ অবস্থাকে ইউরোপের জন্য ১৯৩৯ সালের পর সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা।

তিনি বলেন, অতীতের মতো তার দেশের মানুষ আর ভুল করবে না। এখন ইউক্রেনের জন্য শুধু অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দরকার।

তবে মস্কো বলেছে, তারা এই অবস্থা থেকে পেছনে আসবে না। এই সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে ইউক্রেনকে সামরিক নিরপেক্ষ হতে হবে। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘নিরস্ত্রীকরণ’ করলেই কেবল যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন পুতিনের সহযোগী ভায়াচেসলভ ভলোদিন।

এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে রুখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, জি৭ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বিয়ারবক বলেছেন, আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের মিত্রদের নিরাপত্তা জোরদার করব এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিধ্বংসী নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ প্যাকেজ দেব।

এরই মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিগগির মস্কোর ওপর পশ্চিমাদের বৃহৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে।

বিশ্নেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে রাশিয়ার ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।

বিশ্ববাজারে অস্থিরতা
রাশিয়ার এই আক্রমণ ঘিরে যেমন একদিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তেমনি বিশ্বজুড়ে তেল ও জ্বালানির দাম হু হু করে বাড়ছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি খুব দ্রুত ১১০ ডলার ছাড়াতে পারে। এরই মধ্যে রুশ মুদ্রা রুবলের দাম দ্রুত পড়ছে। ছয় বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে লেনদেন স্থগিত করেছে মস্কো এক্সচেঞ্জ।

মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বিশ্ববাজারে অস্থিরতার পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পূর্ব ইউক্রেনে মানবিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনে দ্রুত মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য দ্রুত সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা-আইসিআরসিও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনীয়দের নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ফিনল্যান্ড।

রাশিয়ার ২৪ স্থানে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ
এরই মধ্যে রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন করে মানবাধিকারকর্মীসহ অন্তত ১৬৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অধিকারকর্মী মারিয়া লিটভিনোভিচ বলেছেন, মস্কোসহ ২৪টি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন দেশটির ৫০০ সাংবাদিক-বিজ্ঞানী। পাশাপাশি এতে সংহতি জানিয়ে বহু সরকারি কর্মকর্তাও সই করেছেন।

এছাড়া দেশটির বিরোধী নেতা ও পুতিনের কট্টোর সমালোচক অ্যালেক্সাই নাভালনিও রুশ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
সুত্র : সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান ও আলজাজিরা।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।