
কিয়েভ ঘিরে অজানা শঙ্কা, ৬৫ কি.মি. দীর্ঘ রুশ সামরিক বহর
বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
রাশিয়ার ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সামরিক বহর। দ্রুত ছুটে যাচ্ছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে। তবে কি এখন রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য কিয়েভ দখল!
যে পরিমাণ সামরিক বহর রাজধানীর কাছে পৌঁছে গেছে তাতে যে কেউ আতঙ্কিত হবেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বেলারুশ। তারাও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরিস্থিতি বলছে- ইউক্রেনের উপরে বড় মাপের হামলা চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির রাজধানী কিয়েভের দিকে যাচ্ছে রাশিয়ার বিশাল এক সামরিক বহর। ফলে পুরো ইউক্রেনে আতঙ্কের এক শীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছে।
শঙ্কা চারদিকে।
সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি আশঙ্কা করে বলেছিলেন, পরের ২৪ ঘণ্টা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় অবশ্য পেরিয়ে গেছে। কিন্তু রাশিয়ার এমন প্রস্তুতি সেই ভয়কেই আবার জাগিয়ে দিয়েছে।
এমন সময়ে পশ্চিমারা রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। ওদিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে মঙ্গলবার জেলেনস্কি ও তার দেশবাসীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। এ সময় পার্লামেন্ট সদস্যরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিকে। তখন তারা পরেছিলেন টি-শার্ট। তাতে ইউক্রেনের পতাকা আঁকা।
বিবিসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সামরিক বহর প্রায় ৪০ মাইল বা ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। স্যাটেলাইট কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজি এ ছবি প্রকাশ করেছে।
স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বেলারুশ থেকেও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। সেখানে সেনাবাহিনী ও যুদ্ধ হেলিকপ্টার অবস্থান করছে। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ২০ মাইলের কম দূরত্বে এই সমর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিয়েভ দখলে রাশিয়া উঠে পড়ে লেগেছে বলেও জানিয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। সেখানে হামলা জোরদার করেছে দেশটি। রুশ সেনারা কিয়েভের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় সোমবার বেলারুশ সীমান্তে ইউক্রেন-রাশিয়া যে সংলাপ হয়েছে, তা দৃশ্যত লোক দেখানো বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, সেখান থেকে কোনোই সিদ্ধান্ত আসেনি। পরবর্তীতে আরও সংলাপের কথা বলা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সেই পরবর্তী সংলাপ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি দেয়া উচিত। কিন্তু রাশিয়া তা করেনি। তারা উল্টো আগের চেয়ে হামলা জোরালো করেছে। প্রস্তুতি নিয়েছে সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়া সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের ওখতিরকা সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার হামলায় সোমবার ইউক্রেনের কমপক্ষে ৭০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
মারিউপোলের মেয়র বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এই বন্দর শহরটি রাশিয়ার গোলায় বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভের আবাসিক এলাকাগুলোতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে আরো সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো।
তিনি বলেছেন, বেলারুশের বিরুদ্ধে যেকোনো উস্কানি এবং সামরিক অভিযান থামিয়ে দিতে পারে এমন সুপ্রশিক্ষিত গ্রুপের সদস্যদের দ্রুত মোতায়েন করা হচ্ছে।
ওদিকে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও নিষিদ্ধ হয়েছে রাশিয়ার জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ ক্লাব টিমগুলো। পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক সংস্থা ফিফা ও উয়েফা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে রাশিয়া।
অন্যদিকে রাশিয়ান অ্যাথলেটদের নিষিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি স্পোর্টস ফেডারেশনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রাশিয়া রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে
খারকিভ শহরে হামলার জবাবে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ এনেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়ার আর্টিলারি তার দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর খারকিভে হামলা চালাচ্ছে। এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি স্বীকৃতি চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এই সন্ত্রাসের লক্ষ্য আমাদের ভেঙে দেয়া। আমাদের প্রতিরোধকে ভেঙে দেয়া।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই অভিযোগ করেন। বলেন, রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ হলো মস্কোর প্রধান টার্গেট।
জাতিসংঘের হিসাবে ১৩৬ বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৩ শিশুসহ রাশিয়ার হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি। নিহতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।
রুশ সেনাদের গোলায় নিহত অন্তত ৭০ ইউক্রেনীয় সেনা
রাশিয়ার ট্যাংক থেকে ছোড়া গোলায় ৭০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। দেশটির রাজধানী কিয়েভ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের মধ্যবর্তী একটি শহরে ওই গোলাবর্ষণ করে রুশ ট্যাংক বাহিনী। ওখতিরকা নামের ওই শহরটির সেনাঘাঁটি টার্গেট করে গোলা ছোড়া হয়। এছাড়া কিয়েভ ও খারকিভেও হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। এ খবর দিয়েছে এপি।
খবরে জানানো হয়েছে, ওখতিরকা অঞ্চলের প্রধান দমিত্রো জাভায়েৎস্কি টেলিগ্রাম চ্যানেলে এই রুশ হামলার কথা জানিয়েছেন। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একটি ছবিও যুক্ত করে দিয়েছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে পরে তিনি দাবি করেন, রাশিয়ারও অনেক সেনা তারা হত্যা করেছেন এবং রুশ হামলায় স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রাণ হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, আর্টিলারি হামলায় ইউক্রেনের একটি সামরিক ইউনিট ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। অনেক মানুষ মারা গেছে। এখন ৭০ জন ইউক্রেনীয় সৈন্যের জন্য কবরস্থান তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু শত্রুরা যা পাবার তা পেয়ে গেছে। অনেক রুশের মৃতদেহও ছিল। তাদের মৃতদেহ রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তবে দমিত্রো জাভায়েৎস্কির দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ইউক্রেনের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র খারকিভেও পর পর হামলা চালাতে শুরু করেছে রাশিয়ার পদাতিক এবং বিমান বাহিনী। সেনাঘাঁটির পাশাপাশি বসতি এলাকাগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে তারা।
মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনে প্রবেশ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনের দাবি, এই পাঁচ দিনে রাশিয়ার হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৫০ বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ জন শিশু। এরমধ্যে সোমবার রাতে বেলারুশের কাছে যুদ্ধরত দু’টি দেশ ইউক্রেন এবং রাশিয়ার শান্তি আলোচনার প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে। তারপর থেকেই রুশ হামলা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে ইউক্রেনে।