অধিক ‘মস্কো-প্রীতি’তে দু’কূলই গেল নয়াদিল্লির!
1 min read

অধিক ‘মস্কো-প্রীতি’তে দু’কূলই গেল নয়াদিল্লির!

বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

ঘটনার গতি যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে মোদী সরকারের ভিতরেও রাশিয়া নীতি নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছে। ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা যা আরও বাড়িয়েছে। ইউক্রেনকে মানবিক সাহায্য দিতে চাওয়া বা বারবার হিংসা বন্ধের জন্য আবেদন করা তারই লক্ষণ। তবে এই লক্ষণ ‘সামান্য’ বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

রাশিয়ার বিপক্ষে না যাওয়ার জন্য একাধিক কারণ তুলে ধরছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার প্রতি ভারতের প্রবল প্রতিরক্ষা নির্ভরতার বিষয়টিকে প্রচ্ছন্ন রেখে সামনে আনা হচ্ছে সেই কূটনৈতিক কারণকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই যুক্তিগুলির বেশির ভাগই ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তামাদি হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি মস্কোর বিরুদ্ধাচরণ না করার ফলে রাশিয়া থেকে ভবিষ্যতে অস্ত্র কেনার বিষয়টি এখনও গলা পর্যন্ত জলে। আমেরিকা এ বিষয়ে তাদের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা থেকে আর ছাড় দেবে না নয়াদিল্লিকে।

ফলে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে চলতি প্রবাদে বলা হচ্ছে, আম এবং ছালা দুই-ই হাতছাড়া হওয়ার জোগাড়।

মূল যে কারণগুলিকে যুক্তি হিসাবে দিল্লির তরফে সামনে আনা হচ্ছে, তার প্রথমটি হল, ভারতের অস্ত্র সরঞ্জাম সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করে রাশিয়া। কূটনৈতিক ভাবে ভারতের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দেশও বটে। কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে তারা সমর্থন করেছে। তাছাড়া আরও একাধিকবার একাধিক ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় অত্যন্ত সক্রিয় ভাবে তারা ভারতের পাশেই ছিল। তা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়া মানে তাদের আরও বেশি করে চীনের দিকে ঠেলে দেয়া। যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে অত্যন্ত বিপদজনক।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কারণগুলি এখন জোড়ালো হয়ে গিয়েছে। রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ তো বটেই, কিন্তু সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্তত ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পরে বারবারই দেখা গিয়েছে, অস্ত্র সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা, দর কষাকষি, বিলম্ব করে অনেক সময় দাম দ্বিগুণ করে নেয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে মস্কো। তুলনামূলক ভাবে ফ্রান্সের রফতানি কিন্তু অনেক দ্রুত। যদিও তাদেরও দাম খুবই চড়ে গিয়েছে মোদী জমানায়।

ভারতকে সরাসরি সহায়তা করা দূরে থাক, পুতিন প্রশাসনকে বরাবরই দেখা গিয়েছে, ভারত-বিরোধী চীনা আগ্রাসনে চোখ বুজে থাকতে। এ কথাও বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, এই রাশিয়াই আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা থেকে ভারতকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

নয়াদিল্লি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনছে রাশিয়া থেকে। কিন্তু পুতিন প্রশাসন ভারতকে আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ তকমা দিতে ছাড়ছে না। ২০১৯ এবং ২০২০— পরপর দু’বার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলেছিল চীন। সে সময় কোনও সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি মস্কোকে। সে সময় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু দেশ ভারতের পাশে দাঁড়ায়।

চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাতে আমেরিকা এবং ইউরোপ পাশে দাঁড়ায়নি বলে যে অভিযোগের স্বর সাউথ ব্লক থেকে শোনা গিয়েছে, তারও কোনও কারণ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। মোদী প্রশাসন নিজেই লাদাখ এবং অরুণাচলে চীনের আগ্রাসনকে লঘু করে দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে কোনও প্রস্তাব আনার কথাও বলেনি নয়াদিল্লি। ভারত যে তার ভূখণ্ডের দখল হারিয়েছে, সেই প্রসঙ্গই বারবার এড়িয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত আমেরিকার সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত কেন জেস্টার বলেছেন, ভারত-আমেরিকা আলোচনায় বা কোয়াড বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে চীনের উল্লেখ না করা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ঘটনার গতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে মোদী সরকারের ভিতরেও রাশিয়া নীতি নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছে। ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা যা আরও বাড়িয়েছে। ইউক্রেনকে মানবিক সাহায্য দিতে চাওয়া বা বারবার হিংসা বন্ধের জন্য আবেদন করা তারই লক্ষণ। তবে এই লক্ষণ ‘সামান্য’ বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *