রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : আকাশে গোলা, নিচে গুলি; মানুষ ছুটছে রুদ্ধশ্বাসে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : আকাশে গোলা, নিচে গুলি; মানুষ ছুটছে রুদ্ধশ্বাসে

বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দশম দিন ছিল শনিবার। যুদ্ধের বর্বরতা আর বারুদের গন্ধ চারদিকে। ইউক্রেনের মারিউপোল ও ভলোনোভাখায় টলমল যুদ্ধবিরতির মধ্যে চলেছে রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার তৎপরতা। তাতে পদে পদে বাধা আর মৃত্যুঝুঁকি। মরছেও অনেকে।

মারিউপোল ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী। শহরটিতে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ছিল শনিবার। বেসামরিক মানুষকে সরে যাওয়ার জন্য দেয়া হয়েছে ‘মানবিক পথ’। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। পাল্টা অভিযোগে মস্কো বলেছে, উগ্র জাতীয়তাবাদীরা সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য আটকে রেখেছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মারিউপোলের আকাশে গোলা, নিচে গুলি। থেকে থেকে হচ্ছে বিস্ম্ফোরণ। কেঁপে উঠছে মাটি। মুহূর্তে তছনছ ঘরবাড়ি। চোখের সামনে পুড়ছে সব। কান্নার রোল চারদিকে। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে ধ্বনিত হচ্ছে চিৎকার। কেউ কেউ প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাদের হাতে হাতে অস্ত্র। বেশিরভাগই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে দিজ্ঞ্বিদিক। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কর্মীরা মারিউপোলের পরিস্থিতিকে ‘বেদনাদায়ক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ছবি ও ভিডিওতে মারিউপোলের করুণ চিত্র দেখা গেছে। জীবন নিয়ে পালাচ্ছে উদ্ভ্রান্ত মানুষ। তাদের এক হাতে ব্যাগ, এক হাতে শিশু- কোলে ও কাঁধে। শিশুর মলিন চোখে ক্যামেরার চোখ পড়লেই ফুটে উঠছে জিজ্ঞাসা- কেন এই যুদ্ধ? তবু যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার পরাক্রমী বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে তুলেছে দেশটির যোদ্ধারা। তবে রাজধানীর আশপাশ ছত্রখান হয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধসে গেছে সেতু। সেখানে দেখা গেছে, হাতে হাত ধরে মানুষ অগভীর নদী পার হচ্ছে দলে দলে- শিশু ও বৃদ্ধও আছে। অন্তঃসত্ত্বা নারী আছে। অসুস্থ মা আছে। সেই দলে আছে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত শরীরে টলে পড়া কিশোর ও কিশোরী। উদ্ধারকারীদের হাতে ও কোলে দেখা গেছে আহত শিশু। যুদ্ধের বিভীষিকায় পদে পদে পরাস্ত হচ্ছে মানবতা।

হতাহত ও শরণার্থী
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৩৫১ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সেনাসহ নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৫৮। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইউক্রেনীয় শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। পথে রয়েছে আশ্রয়ের খোঁজে থাকা কয়েক লাখ মানুষ। এদিকে, কিয়েভে স্কাই নিউজের এক সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের রাস্তায় হাজারো প্রতিরোধকারী :ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নেয়ার পর শনিবার কেন্দ্রটি ঘিরে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় জড়ো হয়। সেখানে তারা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলমুক্ত করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এ দিন কৃষ্ণসাগরের পাড়ের বন্দর-শহর খেরসনেও তুমুল প্রতিবাদ করেছে ইউক্রেনীয়রা। খেরসন রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে। এটি মুক্ত করার শপথ নিয়েছে তারা। দুটি শহরেই গতকাল পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। খেরসন, মারিউপোল এবং ওডেসা সমুদ্রবন্দরকেন্দ্রিক নগরী। এগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন এখন প্রায় সমুদ্রপথ থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মধ্যে খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা যদি হয়, তাহলে গোলাগুলির আঘাতের চেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা বেশি মর্মান্তিক হয়ে উঠবে।

নো-ফ্লাই জোনে ন্যাটোর ‘না’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ন্যাটো মহাসচিব হয়েস স্টলটেনবার্গ বলে দিয়েছেন, নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা সম্ভব নয়। এটি করলে তা বাস্তবায়নও করতে হবে; গুলি করে ভূপাতিত করতে হবে রাশিয়ার জঙ্গিবিমান ও উড়োজাহাজ। তাতে এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে যাবে ন্যাটো।

পুতিনের হুংকার
ন্যাটোর এই আশঙ্কা সত্ত্বেও গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন আরেক কাঠি সুর চড়িয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে তা হবে এই সংঘাতে ন্যাটোর যোগদানের শামিল। একই সময় রাশিয়ার ওপর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা না দিতে পশ্চিমা বিশ্বকে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

তার মতে, নিষেধাজ্ঞার নামে যুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

পরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ বলেছেন, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সরকার যেভাবে উস্কানিমূলক সাহায্য করছে, তা কোনো দিন ভুলবে না রাশিয়া। পাল্টা পদক্ষেপেই তাদের জবাব দেওয়া হবে। এ দিন সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লোটের কর্মকর্তারা পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তখন পুতিন বেলারুশ ও সার্বিয়া বাদে অ্যারোফ্লোটের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফর
যুদ্ধের মধ্যেই শনিবার মস্কো সফর করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করলেও তার ফল কী, সে বিষয়ে জানা যায়নি।

যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর চেষ্টা
দুই শহরে শনিবার পাঁচ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষে এর মেয়াদ আরও কয়েকটি দিন বাড়ানোর জন্য মস্কোর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এ নিয়ে মস্কোর পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।

মস্কো-ওয়াশিংটন আলোচনা চলছে
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে একটি হটলাইন চালু রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে ভাঙার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।