এএসপি আনিসুলকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়, নির্যাতন ছিল ‘মধ্যযুগীয় কায়দায়’

এএসপি আনিসুলকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়, নির্যাতন ছিল ‘মধ্যযুগীয় কায়দায়’

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

বরিশালের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

অতিসম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেয় আদাবর থানার পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা এই তথ্য জানিয়েছেন।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এএসপি আনিসুল করিমকে।

আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন। তিনি সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এএসপি আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অপেশাদার লোকদের দিয়ে দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে ঘাড়ে, বুকে, মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

তবে ঘটনার পরপর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছিল, এই রোগীর চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনো পর্যায়েই চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এএসপি আনিসুল করিম সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার তিন থেকে চারদিন আগে চুপচাপ হয়ে যান। বিষয়টি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোচিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ঘটনার আগের দিন আনিসুল করিমের একজন ভগ্নিপতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাব্যবস্থা তেমন উন্নত না। রোগীকে সেবা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল সেখানে নেই। তাই রোগীকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা ভালো হবে। তিনি নিয়মিত সেখানে চেম্বার করেন।

৯ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এএসপি আনিসুল করিম মাইন্ড এইড হাসপাতালে আসার পর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ সিগারেট খাওয়ার কথা বলে আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। এরপর রেদোয়ান, মাসুদ খান, জোবায়ের, তানভীর, তানিফ, সজীব, অসীম, লিটন ও সাইফুল চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আনিসুলকে নিয়ে প্রথমেই মারধর করে ফেলে দেয়া হয়। তখন আসামি মাসুদ খান ও তানভীর হাসান রোগীর পিঠের ওপর চেপে বসেন। আর অসীম আনিসুলের দুই হাত পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলেন। সজীব আনিসুলের ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। তানিফ ঘাড় ও মাথায় আঘাত করেন ও আনিসুলের মাথার ওপর চেপে বসেন। লিটন, জোবায়ের ও সাইফুল রোগীর পা ও শরীর চেপে ধরে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।




এই পাতার আরও সংবাদ