
‘মেয়েকে ধর্ষণের মূল্য কি ৯০ হাজার টাকা?’, ধর্ষিতার মায়ের প্রশ্ন আদালতে
সারাদেশ ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
কিশোরীকে ‘ধর্ষণের পর’ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন গ্রাম্য মাতব্বর। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপ বা হুমকিতে দমে যাননি মা। অপরাধীদের সমুচিত শাস্তির দাবিতে তিনি গেছেন আদালতে।
আসামিদের রক্তচক্ষু বা হুমকি উপেক্ষা করে সাহসী মা আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে যেকোনো সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানান। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারককে প্রশ্ন করেছেন, ‘মেয়েকে ধর্ষণের মূল্য কি ৯০ হাজার টাকা?’
গত ৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে এমন ঘটনায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সীমান্তবর্তী বড়ঠোটা গ্রামে গত বছর নিজের কিশোরী মেয়ে ‘অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার’ হয় বলে জানান তার মা।
সেই ঘটনায় স্থানীয় মাতব্বরদের কথামতো আপোষ-মীমাংসায় না গিয়ে কিশোরীর মা কসবা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামের সাইফুল মিয়া (২২), খোকন মিয়া (৩৫) ও হরিয়াবহ গ্রামের শামিম মিয়া (৩২)।
এ ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যান। পুলিশও তদন্তের পর এই তিনজনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয়।
মামলার প্রধান আসামি সাইফুল সাত মাস পলাতক থাকার পর গত ৭ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে। সাইফুলের পক্ষ নেয়া গ্রাম্য মাতব্বররা সেদিন সেই মাকে ‘জোরপূর্বক’ আদালতে নিয়ে যান।
মায়ের অভিযোগ, মাতব্বর মোর্শেদ মিয়া, আবদুল হান্নান তাকে ৯০ হাজার টাকা নিতে বাধ্য করেন।
এরপর মামলার বাদী কিশোরীর মাকে আদালতের কাঠগড়ায় আনা হলে তিনি বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হুজুর, আমার মেয়ের ধর্ষণের মূল্য কি ৯০ হাজার টাকা? আমার ব্যাগে এই টাকা আছে। আমি ধর্ষণের বিচার চাই, টাকা চাই না।’
এসময় আসামি পক্ষের ৭-৮ জন আইনজীবী হৈচৈ শুরু করেন। কিশোরীর মা সেই টাকা আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দিয়ে দেন। পরে শুনানি শেষে আদালত আসামি সাইফুলকে জেলহাজতে পাঠান।
সেই মা পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম আমার মেয়ের সর্বনাশ করে পালিয়ে আমাকে নানা ভাবে হয়রানি করেছে। আমি ওদের টাকা ফেরত দিয়েছি। আমি আদালতে বিচার চেয়েছি।’
‘এরা কেন টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করতে আসে। আসামি পক্ষের লোকজন ও সর্দাররা আমাকে আদালতেই হুমকি দিয়েছে।’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী বলেন, ‘আমি টাকা চাই না। আমার ইজ্জত নষ্ট করেছে। আমি আদালতের মাধ্যমে এর বিচার চাই।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফেরদৌস ভূইয়া বলেন, ‘ধর্ষণ মামলা আপোষযোগ্য নয়। বাদী অভিযোগ করলে ওই সকল মাতব্বরদের আদালতে হাজির হতে হবে। সেই মা আদালতের কাছে তার মেয়ের ধর্ষণের বিচার চেয়েছেন।’
গনকমুড়া গ্রামের অভিযুক্ত মাতব্বর মোর্শেদ সর্দার বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মায়ের সম্মতিতেই আমি হান্নান ও কবির মিয়াকে নিয়ে এর মীমাংসা করেছিলাম। কারণ মেয়েটি সুন্দরী এবং তার ভবিষ্যত চিন্তা করে এমনটি করেছিলাম। কিন্তু আদালতে গিয়ে ধর্ষিতার মা কথা রাখেননি। মেয়েটির মা প্রতারণা করেছে।’
কসবা উপজেলা নাগরিক সমাজের সাধারন সম্পাদক নেপাল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘গ্রাম্য সর্দারদের কে এই ক্ষমতা দিয়েছে অসহায় নারীকে বল প্রয়োগ করে নব্বই হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের মীমাংসা করতে? এ সমস্ত সর্দারদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’