রাজনীতি
বিএনপির ১৯ নেতা কেন ‘বোতলবন্দি’!

সারাদেশ ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
আটত্রিশ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। এদের মধ্যে ১৯ নেতাকে করা হয়েছে ‘বোতলবন্দি’। তারা আছেন পদে, তবে রাখা হয়নি কাজে! দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়ও একঘরে তারা। এমন সিদ্ধান্ত এসেছে খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতার অঙ্গুলি হেলনে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ওই কমিটি যেন ‘গিনিপিগ’, সুদূর লন্ডনে বসে সেই কমিটি কাটাছেঁড়া করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দল পুনর্গঠনে চট্টগ্রামকে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে দেখছেন তিনি; চালাচ্ছেন রকমারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
সূত্র মতে, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর আগেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিদ্যমান কমিটির সদস্যদের সম্পর্কে খোঁজ নেন দলের এই শীর্ষ নেতা। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি নিরপেক্ষ উৎস থেকেও তুলে আনেন ‘আমলনামা’। এরপর কাউকে ‘যোগ’ আর কাউকে ‘বিয়োগ’ করে দল সাজানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তারেক।
দলে ‘যোগ-বিয়োগের’ খেলায় বিএনপির রাজনীতিতে এখন বেশ আলোড়ন। এতে কেউ খুশি, কেউ বেজার। দলের শীর্ষ নেতার ‘ভয়ে’ প্রতিক্রিয়া দেখানোর সাহসও খুইয়েছেন ‘ঝরে পড়া’ নেতারা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ৩৯ সদস্যের হলেও একজন মারা যাওয়ায় ওই কমিটি এখন ৩৮ জনের। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ১৯ জনকে ‘কোণঠাসা’ করার বিপরীতে যুক্ত করা হয়েছে কমিটির বাইরের ১২ নেতাকে। সব মিলিয়ে দল পুনর্গঠন কার্যক্রমে রয়েছেন ৩১ জন।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বাইরের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতিকে ‘নিরপেক্ষ নেতা’ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি শেষ করছেন তারেক রহমান। এ জন্য সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে। পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্সের চার সদস্য হলেন মহানগর বিএনপি নেতা একরামুল করিম, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন ও এস কে খোদা তোতন।
টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক করা হয়েছে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন মজুমদার ও হারুনুর রশিদকে। কমিটিকে সার্বিক সহায়তা করছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
এছাড়া নগরীর আওতাধীন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো পুনর্গঠনে কাজ করছে টাস্কফোর্সের অধীনে গঠন করা পাঁচটি কমিটি। এসব কমিটির প্রধান হচ্ছেন এরশাদউল্লাহ, এম এ আজিজ, কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও এস এম সাইফুল আলম।
দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে যে ১৯ নেতাকে দূরে রাখা হয়েছে তারা হলেন আবু সুফিয়ান, শামছুল আলম, জয়নাল আবেদীন জিয়া, মাহাবুব আলম, মফিজুল হক ভূঁইয়া, নুরুল আলম রাজু, আশরাফ চৌধুরী, এস এম আবুল ফয়েজ, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন লিপু, মনজুর আলম মনজু, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম, গাজী সিরাজ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, মনজুর আলম চৌধুরী, এয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইসকান্দার মির্জা ও আবদুল মান্নান।
এদের মধ্যে আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করছেন। তার দাবি, আরেকটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বে থাকায় দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রাখা হয়নি তাকে।
গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন তারেক রহমান। গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকে আমন্ত্রণই পাননি ১৯ বিএনপি নেতা। বৈঠকে নগর বিএনপির ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে দল পুনর্গঠনে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়; তাতেও রাখা হয়নি তাদের।
অন্যদিকে সেই বৈঠকে কমিটিতে না থাকার পরও ডাক পান ১২ বিএনপি নেতা। তারা হলেন একরামুল করিম, সাহাব উদ্দিন, এসএমজি আকবর, খোরশেদ আলম, ইসমাইল বালি, মজিবুল হক, আবদুস সাত্তার সেলিম, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, সিহাব উদ্দিন মুবিন, মোহাম্মদ আজম, মনোয়ারা বেগম মনি ও মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন।
নগর বিএনপির কমিটির সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেয়ার সুযোগ পান দলের আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল, শাহ আলম মো. হারুন জামান, মোহাম্মদ আলী, নিয়াজ খান, ইকবাল চৌধুরী, আহমেদুল আলম চৌধরী রাসেল, আর ইউ চৌধুরী শাহীন ও এরশাদ উল্লাহ।
কমিটির এসকল সদস্য ও নতুন করে ডাক পাওয়াদের নিয়ে দল পুনর্গঠনে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া গত ২৯ মার্চ টাস্কফোর্সের সদস্য ও বিভিন্ন উপকমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন টাস্কফোর্সের প্রধান বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তাতেও ডাকা হয়নি দল পুনর্গঠন থেকে দূরে রাখা সেই বিএনপি নেতাদের।
বেকায়দায় পড়া বিএনপির এসকল নেতা দলের সিদ্ধান্ত আপাতত ‘হজম’ করে রয়েছেন সুসময়ের অপেক্ষায়। বিপরীতে কমিটিতে না থেকেও দলের কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ায় ১২ বিএনপি নেতা বেশ উজ্জীবিত। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের শীর্ষ নেতার মন জয় করতে চান তারা।
দলের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম থেকে ১৯ নেতাকে কেন দূরে রাখা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির নির্বাহী সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দল পুনর্গঠনে না থাকলেও আমি কমিটিতে আছি। দল ভালো মনে করেছে, তাই এই সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। অতীতে সব সংকটে দলের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’
অভিন্ন কথা বলেন আরও কয়েকজন বিএনপি নেতাও।
তবে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে নগর বিএনপির কিছুসংখ্যক সদস্যকে দূরে রাখা হলেও তারা দলের সঙ্গেই আছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে দল পুনর্গঠন করতে দলের হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যাদের সেই প্রক্রিয়ায় রাখা হয়নি, তারা দলের নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।’
আর টাস্কফোর্সের প্রধান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন হচ্ছে। নগর বিএনপির কিছু সদস্যকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। আবার কমিটির বাইরে থেকেও কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মূলত দল পুনর্গঠন করে বন্দরনগরীতে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করতে দলীয় প্রধান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়নি, তাদের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়নি।’
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।