
পাকিস্তানের মসনদে শাহবাজ, রাজপথে ইমরান খান
বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
নাটকীয় পটপরিবর্তনে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে রাজপথে নেমে পড়েছেন ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান ও তার দল পিটিআই।
সোমবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ। তবে গণপদত্যাগ করে পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে যান ইমরান খান ও তার দলের এমপিরা।
প্রধানমন্ত্রী পদে পিটিআইর প্রার্থী ছিলেন সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি। তিনিও পার্লামেন্ট ছেড়ে যান। ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ।
পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর রাতেই শপথ গ্রহণ করেন শাহবাজ। সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সনজারানি তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। ইমরান খানের আস্থাভাজন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াতে বিব্রত বোধ করছেন বলে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২। এর মধ্যে ইমরান খানের দলের রয়েছে ১৫৫টি। শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের রয়েছে ৮৪টি ও বিলাওয়াল ভুট্টোদের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) রয়েছে ৫৬টি আসন। বাকি আসনগুলো প্রদেশভিত্তিক অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট দলের দখলে।
ইমরান খানের অনুসারী তার দলের সব এমপি পদত্যাগ করলেও তাতে এখনই সাংবিধানিক সংকট তৈরি হচ্ছে না। কারণ, তাদের পদত্যাগপত্র স্পিকার গ্রহণ করেননি। এই মুহূর্তে দেশটির পার্লামেন্টে নির্বাচিত স্পিকারও নেই। অনাস্থা ভোট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইমরানের অনুগত দুই স্পিকার পদত্যাগ করার পর প্যানেল স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক স্পিকার আয়াজ সাদিক।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক বক্তব্যে শাহবাজ শরিফ অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা ও পররাষ্ট্রনীতি মেরামতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা মধ্যে রয়েছে- নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার রুপি করা, পেনশন ১০ গুণ বৃদ্ধি, রমজানে ন্যায্যমূল্যে গম বিতরণ, পাকিস্তানকে বিনিয়োগ স্বর্গ বানানো, বিদ্যুতের উচ্চমূল্য হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ, ছোট প্রদেশে তরুণদের কারিগরি শিক্ষা ও ল্যাপটপের ব্যবস্থা করা এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ‘বেনজির কার্ড’ ব্যবস্থা ফের চালু করা।
এছাড়া রয়েছে- চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি। কাশ্মীর বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভারতের সঙ্গে শর্তমূলক সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলেছেন শাহবাজ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে রাশিয়াকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি শাহবাজ।
বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণের যে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান, সেটি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে অন-ক্যামেরা ব্রিফিং আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহবাজ। যদিও শুরু থেকেই ইমরান খানের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন শাহবাজ ও তার মিত্ররা। তবে অভিযোগে অনড় থেকে রাজপথে নেমে পড়েছে পিটিআই।
শাহবাজ শরিফ ও তার ছেলে হামজা শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে তার মনোনয়ন পার্লামেন্টে বাতিল না করায় গণপদত্যাগ করেছেন পিটিআইয়ের এমপিরা।
রোববার পার্লামেন্টে এসে দলীয় এমপিদের সঙ্গে পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করার সময় ইমরান খান বলেন, রাজপথেই জবাব দেয়া হবে। শাহবাজ সরকারকে বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানে আমদানি হওয়া সরকার বলে বর্ণনা করেন তিনি।
প্যানেল স্পিকারের ভুল
পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটাভুটির সময় প্যানেল স্পিকার আয়াজ সাদিক শাহবাজ শরিফের নাম বলতে গিয়ে তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফের নাম বলে ফেলেন। অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, শাহবাজ শরিফই বলতে চেয়েছিলেন তিনি।
এ সময় তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময়ও তিনি স্পিকার ছিলেন।
প্রদেশ থেকে কেন্দ্রে
শাহবাজ শরিফের জন্ম ১৯৫১ সালে লাহোরে। শিক্ষাজীবন শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন শাহবাজ। ১৯৮৫ সালে পাঞ্জাব চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ ও ১৯৯৩ সালেও পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৯৯ সালে স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করার পর ২০০০ সালে সৌদি আরবে সপরিবারে নির্বাসিত হন তারা। ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নির্বাচিত হয়ে দুই দফায় ফের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে নওয়াজ দণ্ডিত হওয়ায় তাদের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এনের দায়িত্ব নেন এবং পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা হন শাহবাজ।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় তাকে একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে তার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের প্রতিশ্রুতি করেছেন।
দ্য ডন ও জিওটিভি।