রাষ্ট্রপ্রধান যখন জাতির দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠেন

রাষ্ট্রপ্রধান যখন জাতির দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠেন

বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

মাত্র দুইবছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি দেশের জনগণের কাছে ‘দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হয়েছেন।

এমন ভাগ্য সহজে অর্জিত হয়নি। সবাই জানেন যে, ইতিহাসে মাত্র একজন শাসকই একটি জাতির পতনের কারণ হতে পারেন। আধুনিক সময়ে এমন স্পষ্ট উদাহরণ হলো অ্যাডলফ হিটলার। তিনিও একজন নির্বাচিত নেতা ছিলেন। ইতিহাসজুড়ে নিন্দিত যেসব ব্যক্তির উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত যারা, তার মধ্যে তিনি অন্যতম। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা শেষ পর্যন্ত করুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে তার জনগণের কাছে সেই দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠেছেন।

অনলাইন দ্য স্টেটসম্যানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন সব কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, কয়েকদিন পূর্বে পদত্যাগ করেন তার ভাই ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে। দেশে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য তাকে তার ভাই বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন বলে ক্ষুব্ধ হন তিনি। ৯ মে তিনি বিভিন্ন প্রদেশ থেকে কয়েক হাজার সমর্থককে রাজধানীতে জড়ো করেন। তারা মাহিন্দ রাজাপাকসেকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার দাবি জানাতে থাকে। তারা রাজপথে সহিংস দাঙ্গা করেছে। শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ভাঙচুর করেছে বিক্ষোভকারী তরুণ সমাজের স্থাপিত অস্থায়ী ‘স্ট্রাকচার’। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং গ্যালে ফেস গ্রিনের সামনে এসব স্থাপনা তৈরি করেছিলেন। মাহিন্দ রাজাপাকসের এসব সমর্থক হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের অনেকজনকে হাসপাতালে পাঠাতে সফল হয়েছে। এ সময় কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে মাহিন্দ রাজাপাকাসের সমর্থকদের লুণ্ঠনকারীদের থামাতে। তাদের গ্যালে ফেস গ্রিনমুখী উদ্যোগ থামাতে সক্ষম হয় পুলিশ।

স্টেটসম্যান লিখেছে, ‘গোটা গো গামা’ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর চূড়ান্ত দফায় আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। তবে তা কোনো আইন প্রয়োগকারীরা করেনি। করেছে মাহিন্দ রাজাপাকসের প্রাদেশিক রাজনীতিকরা। এক্ষেত্রে তারা তাদের সমর্থকদের সহায়তা নিয়েছে।

পরিস্থিতির অবনতি এখন অনিবার্য। এই অবনতিশীল পরিস্থিতিকে আরও রক্তাক্ত অবস্থায় যেতে দেয়া থেকে রক্ষা করতে জনগণের প্রতি এরই মধ্যে অনুরোধ করেছেন। কারণ, এরই মধ্যে অনেক রক্তপাত হয়ে গেছে। এই অবস্থাকে অব্যাহতভাবে চলতে দেয়ার পরিবর্তে, এই দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটাতে পারেন তিনি এবং একমাত্র তিনিই। ইতিমধ্যে পার্লামেন্টারি বিরোধী দলগুলোর খুব গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত যে, কেন প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকে তাদের অনেককে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছিল। আবার কোথাও মাহিন্দ রাজাপাকসের সমর্থকদের হামলার শিকার তরুণদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে গেলে তাদের স্বাগত জানানো হয়েছিল।

অন্যদিকে সরকার উচ্চাকাঙ্খী। তাদের উচিত নিজেদের আত্মসমালোচনা এবং অতীতের দিকে তাকানো। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের উচিত হবে না পার্লামেন্টে যারা আছেন তাদের প্রত্যাখ্যান করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা।

গোটাবাইয়া রাজাপাকসে অর্থনৈতিক অতল পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন রাতারাতি ঝোঁকের বশে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করে। এরপর তিনি প্রেসিডেন্টের হাতে বেশি পরিমাণ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। অবলম্বন করেন আরও কিছু উদ্ভট নীতি। এতে প্রতিটি সেক্টরে বহুবিধ অকার্যকারিতা নেমে আসে। তাতে দেখা যায়- অসহায়ভাবে আকস্মিক দারিদ্র্যে ডুবে যাচ্ছেন নাগরিকরা। গ্যাস ও জ্বালানির লাইনে মানুষ মারা যাচ্ছেন। গুঁড়ো দুধ থেকে ছাপার কাগজ সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। কোষাগারে ডলারের সঙ্কট দেখা দেয়ায় নিত্যপণ্যের আকাল দ্রুততার সঙ্গে সৃষ্টি হয়।

জনগণের দৃষ্টি অন্য সব খাত থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। এর মধ্যে আছে তার ভাই, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসেকে চাপ দিয়েছেন এবং মন্ত্রীপরিষদকে পদত্যাগ করিয়েছেন। তিনি যে জনগণের দেখভাল করেন তাদের কাছে এসব তুলে ধরলেও দিনশেষে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, সমস্যার মূল কারণ হলেন প্রেসিডেন্ট নিজে। তার জন্যই এক সময়ের মধ্যম আয়ের দেশটি পরিণত হয়েছে নিঃস্ব ও হতাশাজনক অবস্থায়। যেখানে এ অবস্থায় প্রতিবেশী ভারতের শিশুরা কয়েক হাজার রুপি সংগ্রহ করে এই দেশটির অপ্রয়োজনীয় করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে।

তবে জনগণের জন্য ক্রমাগত দুঃস্বপ্ন হল যে, প্রতিটি প্রদেশে মরিয়া প্রতিবাদ সত্ত্বেও, ‘গোটা গো হোম’-এর একটি সর্বব্যাপী স্লোগানে একটি স্পষ্ট বার্তা থাকা সত্ত্বেও, প্রেসিডেন্টের এমন একটি কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে মনে হচ্ছে, যাতে অবিলম্বে দেশ দ্রুততার সঙ্গে পুনরুদ্ধার শুরু করে।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।