বিয়ে ছিল প্রেমের, ৮ বছরেই গলাটিপে হত্যা প্রেমিকা স্ত্রীকে!

সারাদেশ ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বৃষ্টি খাতুন (২৪) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, স্ত্রীকে হত্যা করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে ছিলেন স্বামী মো. সোহেল রানা (২৭)।
এ ঘটনায় গ্রেফতার সোহেল দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার শিবপুর গ্রামের মো. কোহিনুরের ছেলে। তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর এলাকায় স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন ও ছেলে মো. ফাহিমকে (৪) নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
সোমবার (১৬ মে) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান জানান, পাঁচ বছর প্রেম করে ২০১২ সালে বৃষ্টি খাতুনকে বিয়ে করেন সোহেল রানা। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল না। সম্প্রতি সোহেল রানার বাবা-মার ইন্ধনে পুত্রবধূ বৃষ্টিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসছিলেন সোহেল। এছাড়া কারণে-অকারণে তাকে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচিত করতেন স্বামী। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর এলাকার ভাড়াবাড়ির ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় বৃষ্টির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে থানা পুলিশ এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। গত শনিবার (১৪ মে) পিবিআই নিহতের স্বামী সোহেল রানাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়া-বিবাদ হতো। ঘটনার ছয়দিন আগে ঈদের ছুটিতে আসামি সোহেল তার স্ত্রী-সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করতে যান। ঈদ শেষে একমাত্র সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে স্বামী-স্ত্রী দুইজন কর্মস্থলে ফেরেন। ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রীর কাপড় ধোয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সোহেল রানা স্ত্রীর গলা চেপে ধরলে কিছু সময় পরে বৃষ্টির শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে সোহেল বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে স্ত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন। এরপর তিনি সুকৌশলে বারান্দা ও শয়নকক্ষের দরজা বন্ধ করে ঘরের চালের সিলিংয়ের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যান।
এরপর তিনি আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে বলেন, তার স্ত্রী দরজা খুলছে না। এরপর লোকজন আসলে তিনি ঘরের সিলিং ফাঁকা করে ঘরে ঢুকে দরজা খুলে বৃষ্টিকে উদ্ধার করেন। সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। গ্রেফতার আসামি নিজেই তার স্ত্রীর গলাটিপে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে স্ত্রীর ওড়না দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে টানিয়ে রাখেন।
পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতার সোহেলকে রোববার (১৫ মে) গাজীপুর আদালতে পাঠানো হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।