রক্ত দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার দু’তরুণী, ধর্ষকরা তাঁতী লীগ ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত
1 min read

রক্ত দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার দু’তরুণী, ধর্ষকরা তাঁতী লীগ ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত

সারাদেশ ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

সিলেটে বান্ধবীর ভাইকে রক্ত দিতে গিয়ে রাতভর হোটেল কক্ষে দুই তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নরপশুরা রাতভর ধর্ষণের পর ওই দুই তরুণীর কাছে জোরপূর্বক জবানবন্দিও মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখে। ঘটনার পর ওই দু’তরুণী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

এদিকে ঘটনার ৫ দিন পর রোববার রাতে জালালাবাদ থানা পুলিশ দুই ধর্ষিতার দুটি মামলা রেকর্ড করেছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি নিয়ে সিলেটে তোলপাড় চলছে।

গত ২৩ আগস্ট সিলেটের পাঠানটুলায় জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় এই ঘটনা ঘটে।

মামলার আসামিরা হচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোহাইমিন রহমান রাহি, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে জুবেল, পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু, সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিণাপাট গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে নাবিল রাজা চৌধুরী ও সুজন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজন।

আসামিদের মধ্যে শিবলুসহ কয়েকজন তাঁতী লীগ ও নাবিলসহ কয়েকজন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

দুটি মামলায়ই প্রধান আসামি করা হয়েছে ধর্ষণকাণ্ডে সহায়তাকারী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়সিদ্ধি গ্রামের দবির মিয়ার মেয়ে তানজিনা আক্তার তানিয়াকে। সে সিলেট উপশহরের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করে।

মামলায় সিলেটের বালাগঞ্জের গহরপুরের তরুণী জানান, কয়েক মাস আগে আইএলটিএস পড়ার জন্য সিলেট নগরে আসেন তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে নাট্যশিল্পী এক তরুণীর পরিচয় হয়। ওই তরুণী নগরীর শাহজালাল উপশহরের একটি বাসায় থাকতেন। বসবাসের সুবাদে ওই এলাকার স্নেহা বিউটি পার্লারে গিয়ে তানজিনা আক্তার তানিয়া নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় ধর্ষিতা দুই তরুণীর। উপশহরের এইচ ব্লকের ৪নং রোডের আলী ভিলা নামক ৫ তলা বাসায় ভাড়াটে থাকেন তানিয়া বেগম। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আইএলটিএস করতে আসা তরুণীর সঙ্গে তানিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে ওই তরুণীকে বলে- তার ভাইয়ের জন্য এবি পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন। বালাগঞ্জে বাড়ি ওই তরুণীর এবি পজিটিভ রক্ত হওয়ায় তিনি রক্ত দিতে আগ্রহী হন। পরে ওই তরুণী তার রুমমেট বান্ধবীকে নিয়ে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যান।

সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তানিয়া বলে- রক্ত দেয়ার আগে তার এক কাজিনের বাসায় একটু প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন শেষ করে তারা হাসপাতালে যাবেন। এ কথা বলে কৌশলে ওই দুই তরুণীকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় নিয়ে যায়। তাদের দু’জনকে কক্ষে বসিয়ে রাখে। এ সময় তানিয়ার সহযোগী কয়েকজন তরুণ ও যুবক এসে ওই দুই তরুণীকে আটকে রাখে এবং রাত সাড়ে ১১টা থেকে একের পর এক ১০-১২ জন যুবক তাদের দু’জনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের ঘটনার আগে ধর্ষিতাদের কাছ থেকে তাদের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা জোরপূর্বক নিয়ে যায় তানিয়া ও ধর্ষকরা।

এদিকে রাতভর ধর্ষণের পর হোটেল কক্ষের ভেতরেই বন্দি করে রাখা হয় ওই দুই তরুণীকে। পরদিন ২৯ আগস্ট দুপুরে ওই দুই তরুণীকে এক কক্ষে নিয়ে যায় ধর্ষকরা। এক পর্যায়ে তাদের মোবাইল ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে জোরপূর্বক ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি’- মর্মে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। তারা অসামাজিক কাজ করে বলে স্বীকারোক্তিও নেয়। এরপর তাদের দু’জনকে ছেড়ে দেয়া হলে মোবাইল ও টাকা রেখে দেয়া হয়।

অপরদিকে ঘটনার পর মোবাইল ফেরত পেতে ওই দুই তরুণী বারবার ধর্ষণে সহায়তাকারী তানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি।

সিলেটের জালালাবাদ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, ওই দুই তরুণী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। তারা ধর্ষিত হয়েছেন প্রমাণ পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *