চীনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত উহানের একাত্মতার গল্প
1 min read

চীনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত উহানের একাত্মতার গল্প

বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

চীনের বাসিন্দারা উহান জিয়ায়ু বলে চিৎকার করছেন, অনুবাদ করলে যার অর্থ হয় শক্ত থাকো উহান অথবা চালিয়ে যাও উহান।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যখন বাড়ছে, চীনের উহান শহরে তখন লাখ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে- যার কারণ প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল থেকে রোগটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। কিন্তু এই কঠিন সময়েও অনেক মানুষ একে অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলার

যে প্রতিবেশীরা আনন্দ ছড়িয়ে দেয়
এই ভয়াবহ রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এমন সময় যখন চীনের অন্যতম বড় একটি উৎসব চন্দ্র বর্ষ উদযাপন চলছে।

বিশেষ করে যখন ক্রিসমাস এবং থ্যাকসগিভিং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে- সবমিলিয়ে অনেক আনন্দের ব্যাপার। অনেকের কাছে বছরের এটাই একমাত্র সময় যখন তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় এবং খাবার আর টাকাকড়ির মতো উপহার বিনিময় হয়।

ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উহানের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু শহরের একটি এলাকার কিছু ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিজেদের আনন্দে ভরিয়ে তুলতে একটি পথ খুঁজে বের করেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষজন তাদের জানালা থেকে উহান জিয়ায়ু বলে চিৎকার করছেন, অনুবাদ করলে যার অর্থ হয় শক্ত থাকো উহান অথবা চালিয়ে যাও উহান।

এই বাক্যগুলো একটি ব্লক থেকে আরেকটি ব্লকে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাসিন্দাদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে।

এই বাক্যটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও।

সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে এই বাক্য উহান জিয়ায়ু এখন একটি ট্রেন্ডিং বাক্য।

করোনাভাইরাস: লক্ষণ ও বাঁচার উপায় কী?
উহানের সঙ্গে (যেখানে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে) একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য চীনের অনেক এলাকার বাসিন্দারা এই বাক্য লেখা ছবি সেখানে পোস্ট করেছেন।

একজন ওয়েইবোতে মন্তব্য করেছেন, আমরাও একই সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। উহান জিয়ায়ু, পুরো দেশ তোমাদের সমর্থন দিচ্ছে।

ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর একশো জনের বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের বেশিরভাগই উহানের বাসিন্দা। রোগটি এখন চীন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

যদিও চীনে রোগটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভয় এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম উহানের বাসিন্দাদের এসব একাত্মতার নানা গল্প গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে।

যে রেস্তোরা মালিক খাবারের দুইশ প্যাকেট তৈরি করেছেন
উহানের নতুন একটি রেস্তোরার মালিক নতুন চন্দ্র বছর উদযাপন করেছেন শহরের চিকিৎসা কর্মীদের জন্য খাবারের প্যাকেট তৈরি করে। এই তথ্য দিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় দৈনিক পত্রিকা চ্যাঙজিয়াঙ।

শহরে একমাস আগে নতুন রেস্তোরা চালু করেন লি বো। এজন্য তহবিল সংগ্রহ করার জন্য তিনি তার গাড়ি বিক্রি করে দেন এবং টাকা-পয়সা ধার করেন।

কিন্তু ৩৬ বছরের এই ব্যক্তি ব্যবসা পুরোপুরি শুরু করার আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ফলে শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায় এবং রেস্তোরাগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়।

দৈনিক চ্যাঙজিয়াঙ পত্রিকাকে তিনি বলেন, আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি বাসায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছিলাম যে, কীভাবে আমি আমার ঋণ শোধ করবো। কিন্তু যখন আমি খবরে দেখলাম যে, হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছে, তখন আমার মনে হলো আমারও কিছু করা উচিত। আমি আমার জায়গা থেকে কিছু করতে চেয়েছিলাম, তা যত সামান্যই হোক না কেন।

সংবাদ বিষয়ক ওয়েবসাইট বেইজিং নিউজের তথ্য অনুযায়ী, উহানের বেশ কিছু হাসপাতালে খাবার সংকট রয়েছে। উহানের দুইজন বাসিন্দা এর আগে বিবিসিকে বলেছেন যে, শহরের বাসিন্দারা খাবার মজুদ করার চেষ্টা করছেন।

বাবুর্চিকে সঙ্গে নিয়ে লি বো সারাদিন চেষ্টা করে খাবারের উপকরণ কিনেছেন এবং দুইশ বাক্স বানানোর মতো খাবার রান্না করেছেন।

পরবর্তীতে সেগুলো উহানের শিহে হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মীদের ভেতর বিতরণ করা হয়।

ওই সংবাদ মাধ্যমকে লি বো বলেছেন, চিকিৎসা কর্মীরা যাতে গরম খাবার খেতে পারেন, সেজন্য আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আমার আশা, তাদের যে পুষ্টির দরকার, তারা তা পেয়েছেন যা তাদের জন্য শারীরিকভাবে উপকারী হবে।

তিনি জানিয়েছেন, যতক্ষণ তার পক্ষে সম্ভব, ততক্ষণ তিনি খাবার সরবরাহ চালিয়ে যেতে চান।

আমি আশা করছি, আমাদের ভালোবাসার শহরটি খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।

যে গ্রামবাসী ১৫০০০ মাস্ক দান করেছেন
করোনাভাইরাসের ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চীন জুড়ে হাজার হাজার মানুষ মাস্ক কিনে পড়তে শুরু করেছেন, ফলে অনেক স্থানে মাস্কের সংকট তৈরি হয়েছে।

মাস্ক এতোটাই দামী বস্তুতে পরিণত হয়েছে যে, ওয়েইবো অনেকে মজা করে লিখেছেন, লুনার নিউ ইয়ারে তারা অর্থকড়ির দামী উপহারের বদলে মাস্ক পেতে বেশি পছন্দ করবেন।

উহান যে হুবেই প্রদেশে অবস্থিত, তার পার্শ্ববর্তী চ্যাঙ্গডির একজন গ্রামবাসী হাও জিন সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি প্রায় ১৫০০০ মাস্ক দান করবেন, জিয়াওজিয়াঙ মর্নিং হেরাল্ডের খবর।

হাও জিন গতবছর একটি মাস্ক উৎপাদন কারখানায় কাজ করেছেন। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ওই কোম্পানি তার বেতন দিতে পারেনি।

ফলে বেতনের বদলে ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাকে ১৫০০০ মাস্ক দেয় কোম্পানিটি, যার বাজার মূল্য ২০ হাজার ইউয়ান ( ২৮৮৩ ডলার)।

মাস্কগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে সেগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু মাস্ক সংকটের খবর পড়ার পর তার আবার সেগুলোর কথা মনে পড়ে।

আমি ভাবলাম, যাদের এগুলো দরকার, তাদের আমি মুখোশগুলো দান করে দেবো। আমি আশা করছি, তাদের কাছে এগুলো বেশি গুরুত্ব পাবে এবং তারাই ভালো ব্যবহার করতে পারবেন।

নিজের পরিবারের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি মাস্ক তিনি রেখে দিয়েছেন এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে কিছু বিতরণ করেছেন। বাকি মাস্কগুলো তিনি দেশবাসীর জন্য দান করে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *