পাঁচ পুলিশ, দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও ৭ পৌর কাউন্সিলরসহ ৫৬ আসামি দুদকের মামলায়

Dudak 01

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন, ভোটার তালিকাভুক্তি ও পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতার অভিযোগে ৫ জন পুলিশ সদস্য, ৭ জন পৌর কাউন্সিলর, দুইজন ইউপি চেয়ারম্যান, দুইজন ইউপি সচিব ও একজন আইনজীবীসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পৃথক ১২টি মামলায় এদের আসামি করা হয়েছে।

আসামির খাতায় রয়েছে রোহিঙ্গা, স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাও।

গত ২৫ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এ এসব মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোতে অন্তর্ভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাটি।

আসামি যখন ৫ পুলিশ সদস্য
মহেশখালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত প্রভাষ চন্দ্র ধর, পেকুয়া থানার সাবেক ওসি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিআইডির পরিদর্শক মিজানুর রহমান, কক্সবাজার ডিএসবির সাবেক পরিদর্শক বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোর্ট পরিদর্শক কাজি দিদারুল আলম, ডিএসবির সাবেক এসআই বর্তমানে রাঙামাটিতে কর্মরত সাজেদুর রহমান, ডিএসবির সাবেক এএসআই বর্তমানে ফেনিতে কর্মরত জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তারা সবাই কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) দায়িত্ব পালনকালে পাসপোর্ট তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে দুদক।

৭ পৌর কাউন্সিলর
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সেতু, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, সংরক্ষিত সদস্য (১০, ১১, ১২নং ওয়ার্ড) মহিলা দল নেত্রী নাসিমা আকতার বকুল এবং সাবেক নারী সদস্য (১, ২, ৩নং ওয়ার্ড) মহিলা দল নেত্রী হুমায়রা বেগম।

দুই ইউপি চেয়ারম্যান
মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের মোশারফ হোসাইন খোকন এবং কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের রফিক আহমদ।

দুই ইউপি সচিব
২ জন ইউপি সচিবের মধ্যে একজন কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের প্রিয়তোষ দে। অপরজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার।

এ মামলায় আইনজীবী হিসেবে একমাত্র আসামি রয়েছেন কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা ও কক্সবাজার আদালতের এজিপি আবুল কালাম আজাদ-৬।

বাকি আসামির মধ্যে রোহিঙ্গা, রাজনৈতিক নেতা, সমাজপতি রয়েছেন।

ইতোমধ্যে মামলার অন্তর্ভুক্ত চারজন আসামিকে রবিবার (২৮ মার্চ) গ্রেপ্তার করেছে দুদক টিম।

তারা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান এবং জন্মনিবন্ধন শাখার অফিস সহকারী দিদারুল আলম।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দীন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পেতে যে সব ডকুমেন্টস দরকার তা জনপ্রতিনিধিরা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী রোহিঙ্গারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছে।

তিনি বলেন, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা-ডিএসবি অফিসে তদন্তের জন্য প্রেরিত আবেদনের ফাইলগুলো সঠিকভাবে তদন্ত না করে পাসপোর্ট অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেয়ে গেছে রোহিঙ্গারা। এতে বড় ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ মিলেছে।

দুদক কর্মকর্তা আরও বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতাকারী হিসেবে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। যা তদন্তকালে সত্যতা পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে পৃথক ১২টি মামলায় ৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেখানে চারটির অধিক মামলায় পৌর কাউন্সিলররা আসামি রয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে রোববার (২৮ মার্চ) চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।




এই পাতার আরও সংবাদ