যে লবণে চাষীরা পাচ্ছেন ১৩০ টাকা, সেখানে প্যাকেটজাত কেন ১২০০ টাকা!, প্রশ্ন চাষী ও ব্যবসায়ীদের
1 min read

যে লবণে চাষীরা পাচ্ছেন ১৩০ টাকা, সেখানে প্যাকেটজাত কেন ১২০০ টাকা!, প্রশ্ন চাষী ও ব্যবসায়ীদের

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

যে লবণের দাম চাষীরা পাচ্ছেন মণ প্রতি মাত্র ১৩০ টাকা, সেখানে প্যাকেটজাত করার পর সেই লবণ বিক্রি করা হচ্ছে মণ প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা! প্রান্তিক চাষী আর ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছানোর মাঝে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যে, কেনা আর বিক্রির মধ্যে এত ফাঁরাক!

এমন প্রশ্ন তুলেছেন কক্সবাজারের লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৩০ মার্চ) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তুলে প্রান্তিক লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

কক্সবাজার লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ বিকেল ৩টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ইতোপূর্বে সকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে দাবি তোলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষায় এগিয়ে আসুন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারি কৌশলি এডভোকেট মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজ অত্যন্ত দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমরা লবণচাষী ও লবণ ব্যবসায়ীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে আপনাদের লেখনির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইতে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ও বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৫৭,২৭০ একর জমিতে প্রায় ৫৫ হাজার লবণচাষী রয়েছেন। এছাড়াও লবণের উপর বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন আরও ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন, যাদের অন্য কোন পেশা নেই।’

তাঁর মতে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর লবণ শিল্প রক্ষার লক্ষ্যে একটি লবণনীতি প্রণয়ন করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যার ফলে লবণ অধ্যুষিত এলাকার চাষী ও ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ‘লবণ সিন্ডিকেট’ বারবার বিদেশী লবণের উপর দেশকে নির্ভরশীল করে দেশে তৈরি লবণকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল। তখন ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে অপ্রয়োজনে এক মুঠো লবণও আমদানি করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ঘোষণার পর দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর লবণের মূল্য স্থিতিশীল ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে তৃতীয়বার বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে। ভোজ্য লবণ আমদানীতে বিধিনিষেধ থাকায় সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানির নামে অসাধু প্রক্রিয়ায় অনুমতি আদায় করে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি করতে থাকে। সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণকে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করতে শুরু করে। এই সুযোগে মিল মালিকরা দেশীয় লবণ ক্রয় বন্ধ করে দিয়ে বিদেশী লবণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর মাঠে উৎপাদিত দেশীয় লবণ অবিক্রিত অবস্থায় মাঠেই পড়ে থাকে।’

বিসিক সূত্র মতে, ২০২০ সালেই ৩ লাখ ৪৮ মেট্রিক টন দেশীয় লবণ মাঠে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের উপর ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আরোপ করা হয়। সেই ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আদায় করে প্যাকেটজাত করতে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ১৪/- টাকা। কিন্তু দেশীয় লবণ ঘাটতিসহ প্যাকেটজাত করতে প্রতি কেজি লবণে খরচ পড়ে ১৮/- টাকা। যার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় লবণের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ বাজারজাত করে একদিকে মানুষের স্বাস্থ্যহানি করছে, অপরদিকে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস করে পুরো দেশকে বিদেশী লবণের উপর নির্ভরশীল করে ফেলছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, অদ্যাবধি দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের প্রকৃত চাহিদা কতো তা নিরূপণ করা হয়নি। যার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এমতাবস্থায় ইন্ডাস্ট্্িরয়াল লবণের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে স্বাস্থ্যকর দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই মুহুর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, মনে করেন কক্সবাজারের লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মকছুদ আহমেদ, পেকুয়ার উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. কলিম উল্লাহ কলি, হাসান আবেদীন চৌধুরী, জামিল ইব্রাহিম, সিরাজুল মোস্তফা, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জাফর আহমদ চৌধুরী, আকতার উদ্দিন বাবুল, আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, শফিকুল হায়দার, রেজাউল করিম (বদন) প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *