
কক্সবাজারে আইসিইউতে একসপ্তাহে ৫ জনের মৃত্যু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ!
আনছার হোসেন, কক্সবাজার
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ভালো ভাবেই লেগেছে কক্সবাজার জেলা শহরে! এই শহরে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) গেল এক সপ্তাহে পাঁচজন ‘ক্রিটিক্যাল’ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন চকরিয়া, একজন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, দুইজন কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর এবং অন্যজন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার। যাদের মধ্যে ৩ জন মহিলা ও দুইজন পুরুষ রয়েছেন।
কক্সবাজারে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের মতে, কক্সবাজার জেলায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তারা মনে করছেন, করোনাভাইরাস এবার কক্সবাজারে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহজাহান নাজির বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পহেলা এপ্রিল একজন, ৫ এপ্রিল দুইজন ও ৭ এপ্রিল দুইজন মারা যান।
তিনি জানান, বর্তমানে সদর হাসপাতালের আইসিইউতে ৮ জন ও এইচডিইউতে (হাই ডেফিডিয়েন্সী ইউনিট) ২৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। এই দুইটি ইউনিটে ৩১টিই বেড রয়েছে। বর্তমানে কোন বেডই খালি নেই।
ডা. শাহজাহান নাজির বলেন, সবাই কক্সবাজার জেলায় প্রতিদিন কতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সেই পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানের মধ্যে কি পরিমান রোগী খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে তার কোন খোঁজ নেই।
তাঁর দেয়া তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে শুধু সদর হাসপাতালের আইসিইউতে ৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউতে ৮ জন ও এইচডিইউতে ২৩ জন ভর্তি আছেন। যাদের মধ্যে আইসিইউতে প্রত্যেক রোগীরই অবস্থা সংকটাপন্ন। যারা ফিরতেও পারেন, নাও ফিরতে পারেন।
এছাড়াও এইচডিইউতে যে ক’জন ভর্তি আছেন তাদের মধ্যে ১৫-১৬ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এদের মধ্যে অধিকাংশেরই অক্সিজেন সিচুরেশন ৭০ শতাংশের নিচে। তিনজনকে ভেন্টিলেশনের রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহজাহান নাজির বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা থেকে আসা রোগীদের কারণে কক্সবাজারে সংক্রমণ বেশি বাড়ছে। ঢাকায় বর্তমানে প্রতি ৫ জন রোগীর মধ্যে ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, বুধবারও তাঁর সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রাইভেট চেম্বারে ৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী পেয়েছেন।
অপরদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবের প্রতিদিনের করোনাভাইরাস টেষ্টের রিপোর্টে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। গতকাল ৭ এপ্রিল ৬৩৮ জনের টেষ্ট করে ৫৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু মিলেছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদরে আছেন ২৬ জন। তারপর উখিয়ায় ১৪ জন।
মেডিকেল কলেজ ল্যাবের তথ্য মতে, দেশে করোনা সংক্রমন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৩৭৯ জন। যা জেলার মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক। এদের মধ্যে গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মৃত্যুবরণ করছে ৮৬ জন। তার মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১.৩৬%।