কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো বিশাল তিমি

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন হিমছড়ি পয়েন্টে সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছে বিশালাকার একটি মৃত তিমি। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে মরা-পঁচা তিমি মাছটি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তখনও পুরোপুরি জোয়ারের পানি নেমে যায়নি। পূর্ণ ভাটায় সৈকতের বেলাভূমিতে পড়ে থাকা মৃত তিমিটা স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। তবে সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে মৃত তিমিটার সামনের অংশ বিকৃত হয়ে গেছে।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে যান। তাদের ধারণা, তিমিটা ৭ দিন আগে মারা যেতে পারে। যার অনুমানিক বয়স ৭ বছর হতে পারে।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মৃত তিমিটা ৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ২৬ ফুট প্রস্থ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, লকডাউনে সাগরে মাছধরার ট্রলার বেশি নেই। তাই তিমিটা সহজেই তীরে ভেসে এসেছে।
তবে অনেকের মতে, বাংলাদেশের জলসীমায় স্বভাবত এত বিশালাকার তিমির দেখা মেলে না। শান্ত সাগরে কিভাবে এটি তীরে ভিড়লো? বিশেষজ্ঞরাই আসল রহস্য বের করতে পারবে।
এদিকে সাগরে মৃত তিমি ভেসে আসার খবরে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা। এক নজর দেখতে ভিড় করেন মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে চলাচলকারি গাড়ির যাত্রী ও সাধারণ পথচারীরা। মৃত প্রাণীটিকে ঘিরে সবার মাঝে দেখা দিয়েছে কৌতুহল। অনেকে তিমির পাশঘেঁষে ছবি তুলেছেন।
অপরদিকে সাগর পাড়ে তিমি ভেসে ওঠার খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে যান। তারা মৃত তিমিটি দেখেন।
মৃত তিমি পরিদর্শন শেষে এডিসি মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, প্রাথমিক ভাবে এটি তিমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে করণীয় ঠিক করা হবে।
তিনি বলেন, সাগরে লাখো প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ। মাঝে মধ্যে কিছু প্রাণী মারা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবু কোন কারণে তিমিটা মারা গেছে, তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে।
অপরদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে আসা ৪৪ ফুট দীর্ঘ মৃত তিমিটা প্রায় ৮০০ ফুট দূর থেকে রশি দিয়ে টেনে কূলে তোলা হয়েছে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকাল চারটার দিকে তিমিটি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। অনেক কৌশল অবলম্বন করে প্রায় আড়াই ঘন্টা প্রচেষ্টার পর এটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মরা তিমিটার লেজ, পেট ও মাথায় শক্ত করে রশি বাঁধা হয়। এরপর টেনে কূলে তুলেন উদ্ধারকর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তায় কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জোয়ারের পানির ঢেউ মোকাবেলা করে তিমিটা উদ্ধারে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনকর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসবকসহ শত শত সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
মৃত তিমিটা উদ্ধারকালে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মামুন আল ইসলাম, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৃত তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে মৃত তিমিটি মাটিচাপা দেয়া হবে।
তিনি ধারণা করছেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে তিমিটি মারা গেছে। তবে কি কারণে মারা গেছে সেটি জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।
তাঁর মতে, এই প্রজাতির তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব তিমি চোখে পড়ে।
তিমিটি মারা যাওয়ার পর ভাসতে ভাসতে কক্সবাজার সৈকতের উপকূলে ভিড়েছে বলেই মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতবার লকডাউনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জীবিত ডলফিনের দেখা মেলেছিল। এবার ভেসে আসলো মৃত তিমি।
সুত্র মতে, ১৯৯১ উখিয়ার ইনানী সৈকতে, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে হিমছড়ি সৈকতে এভাবে ভেসে এসেছিল বিশালাকার তিনটি তিমি মাছ। যে মাছকে পৃথিবীর সবচাইতে বৃহৎ মাছ বিবেচনা করা হয়।
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।