
আইসিইউর জন্য হাহাকার চলছে হাসপাতালে
ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে অনেকের জন্যই হাসপাতালে ভর্তি এবং সুচিকিৎসা পেতে এক প্রকার হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনটাই দাবি করছেন রোগীর স্বজনরা।
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্তদের সেবাদানের ক্ষেত্রেও মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত রোগী সুস্থ হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলেই যেহেতু কোনো একটি আইসিইউ বেড খালি হয়, তাই রোগী বাড়তে থাকায় আইসিইউ সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ এপ্রিলের বুলেটিনের তথ্যে বলা হয়েছে, সারাদেশে সর্বমোট ৮২৫টি আইসিইউ সজ্জার মধ্যে ৬৫২টিতে রোগী ভর্তি আছে এবং খালি আছে আরও ১৭৩টি আইসিইউ বেড।
যদিও আক্রান্তদের স্বজনদের অনেকেই বলছেন, ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর জন্য প্রয়োজন হলেই একটা আইসিইউ সজ্জা পাওয়া যে কারো জন্যই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্ত, যারা সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড খোঁজেন তাদের জন্য এই সংকট আরো প্রকট বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকার ইব্রাহীম মজিদ নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনদিন আগে তার মায়ের জন্য একটি আইসিইউ সজ্জা জোগাড় করতে সরকারি বেসরকারি প্রায় ৫০টি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হয়েছে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সজ্জার ব্যবস্থা হয়েছে।
ইব্রাহীম মজিদ বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এ এক বিরাট সংকট।
‘আমার মা কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কিন্তু অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে যাওয়ায় তার আইসিইউ প্রয়োজন হয়। ডাক্তার এসে যখন বলে যে তার আইসিইউ প্রয়োজন, কিন্তু ওখানে খালি নেই, তখন বিভিন্ন জায়গায় কল দেয়া হয়। সরাসরি কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েও খোঁজ করা হয়, কিন্তু সাথে সাথে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।’
ওই সময়ের অসহায়ত্ব তুলে ধরে ইব্রাহিম মজিদ বলেন, তখন পরিবারের সদস্যরা এবং বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ফোন করা হয়।
প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় তারা একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইইউ বেড পেয়ে সেখানে তার মা’কে ভর্তি করেন।
তিনি বলেন, ‘কোথাও ম্যানেজ হয় না, কোথায় পাওয়া যায় না। কিছু জায়গা আছে, হ্যা আইসিইউ আছে, কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন বা সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। পরে অনেক খোঁজাখুজির পর একটা পাই, সেখানে ভর্তি করি। পরে কথা বলে জেনেছি অ্যাপ্রক্সিমেটলি ৫০টার মতো হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়েছিল।’
সুত্র মতে, বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ হার ২০ শতাংশের ওপরে। প্রতিদিন ৫ হাজারের বেশি রোগি শনাক্ত হচ্ছে। অনেকের জন্যই হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সুবিধা প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু পাওয়া সহজ নয়।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন সেবিকা রুমানা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি যে কেবিনে ডিউটি করতেছি সেখানে ৩০টা বেড আছে। ৩০টা বেডেই কন্টিনিউ রোগী থাকতেছে। এখন কমতেছে না রোগী।
তিনি বলেন, এই বাড়তি রোগীর কারণে আমাদের নার্সদেরও বেশ চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এটাও বাস্তবতা যে, বেড খালি না থাকায় অনেক সময় নতুন রোগী আসলে ফিরিয়েও দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শুধু এপ্রিল মাসের পনের দিনেই এক হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্যসহ ভাইরাসের নতুন কয়েকটি ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ায় অনেক বেশি রোগী হাসপাতালে অক্সিজেন, এমনকি আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন পড়ছে।
কোভিড ডেডিকেডেট একটি সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশান জাহান সাংবাদিকদের বলেন, এখনকার অবস্থায় যেটা হচ্ছে। রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ভাল আছে, কথা বলছে- এরকম অবস্থায় হঠাৎ করে রোগী বলছে যে, আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের ট্রিটমেন্ট শুরু করার সুযোগও অনেক সময় অনেক রোগী দিচ্ছেন না। অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে- মারাও যাচ্ছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ দিলেও প্রথম সপ্তাহে একেবারেই ঢিলেঢালা ভাবে সেটি পালিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক লকডাউনের শুরুতে কঠোরতা দেখা যাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ সেটি সাধারণ মানুষ এখনো অনুধাবন করতে পারছেন না।
স্বাস্থ্যকর্মী ইশান জাহানের মতে, আসলে এটা খুবই দুঃখজনক যে, সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছেন না যে, পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক। যখন একজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে যান তখন সেই ব্যক্তিটাই বুঝেন যে, হাসপাতালের একটা সিট পাওয়ার জন্য, একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডারের জন্য, একটা আইসিইউ বেডের জন্য কী পরিমাণ হাহাকার চলছে।