আধামণ লবণে মিলছে মাত্র এক কেজি চাল, চরম হতাশায় চাষীরা

আধামণ লবণে মিলছে মাত্র এক কেজি চাল, চরম হতাশায় চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশখালী (কক্সবাজার)
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

লবণ উৎপাদনের স্বর্ণভূমি খ্যাত মহেশখালীতে উৎপাদিত লবণের দাম নেই, মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪০ টাকায়। কিন্তু এই দামের মধ্যে লবণ চাষি পান মাত্র ১১০ টাকা। ইতোপূর্বে এত অল্প দামে কোনদিন লবণ বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন চাষিরা। যার কারণে লাভ তো নয়-ই, বরং উৎপাদন খরচ ওঠছে না, লোকসান গুনছেন প্রান্তিক চাষিরা।

‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ মহেশখালী ঘুরে দেখা যায়, লবণের মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। কয়েক হাজার একর জমিতে চাষিরা লবণ উৎপাদন করছেন। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় সেই লবণ মাঠে স্তূপ করে রেখেছেন তারা। লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন গুনছেন লবণ চাষিরা। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশীয় লবণের দাম নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার লবণ প্রকল্প কার্যালয় সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এই মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ মেট্রিক টন। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহেশখালীতে ৩ কানি (১২০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করতে বর্গা দিতে হয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা। ১২০ শতক জমিতে একজন শ্রমিকের ৬ মাসে খরচ দিতে হয় ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে পলিথিন প্রয়োজন হয় পনেরো হাজার টাকার এবং পানি খরচ বাবদ লাগে আরও ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কানিতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ১২০ শতক জমিতে লবণ উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ ৭৫০ মণ। যার বিক্রয়মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা (এক মণ ১৪০ টাকা)। ফলে প্রতি ৪০ শতকে (১ কানি= ৪০ শতক) লোকসান গুণতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা।

এভাবে দাম পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লবণচাষীরা। অনেকে ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে বাধ্য হচ্ছেন পালিয়ে যেতে।

বড় মহেশখালীর লবণ চাষি আব্দুল মাবুদ বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মৌসুমে ৪০ কানি জমিতে লবণ চাষ করে দিশেহারা হয়ে পড়ছি। জমির লাগিয়ত, শ্রমিকদের মজুরীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। লোকসান লেগে আছে। লবণ গুলো বিক্রি না করে জমা রাখতে হচ্ছে। সামনে কালবৈশাখী ঝড় আসলে তা হবে মরার উপর খাড়ার ঘা।

আধামণ লবণে মিলছে মাত্র এক কেজি চাল, চরম হতাশায় চাষীরা

মাঠে পড়ে আছে লবণের স্তুপ!

অপর এক লবণ চাষি ছাবের আহমদ বলেন, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এক মণ লবণের দাম ১৪০ টাকা। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে তুলনামূলক কম। লবণ বিক্রি করলে প্রতি কেজি পাই ৩ টাকা। লকডাউনে একটা চাউলের বস্তাও ৩ হাজার টাকা। মৌসুমের শেষ দিকেও দাম না বাড়লে পথে বসা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।

তিনি বলেন, লবণের এমন হাল দশা দেখে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি বিদেশে লেভার হিসেবে পাড়ি জমানোর জন্য।

লবণ চাষি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই সমস্যার সমাধানে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। মানববন্ধন করলেও কোন কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি লবণ আমদানি বন্ধসহ লবণ বোর্ড গঠন এবং লবণের মূল্য মণ প্রতি অন্তত ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। লবণ চাষির সাথে জড়িত পঞ্চাশ হাজার মানুষকে বাঁচাতে লবণের ন্যায্যমূল্য চূড়ান্ত করার বিকল্প নাই বলেও মনে করেন তিনি।

বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে কক্সবাজার বিসিকের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী বলেন, প্রান্তিক লবণ চাষিদের কাছ থেকে লবণ ক্রয় করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে লবণ আমদানি করার সুযোগ নাই। তবে কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম সালফেট, গ্লোভার সল্ট আমদানি করে থাকে।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৩ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে লবণচাষিরা এই রকম কোন প্রণোদনা ও সুবিধা কখনও পাননি বলে দাবি করেছেন।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।




এই পাতার আরও সংবাদ