রেকর্ড শনাক্তের একদিন পর কক্সবাজারে ‘পজিটিভ’ ৭২ জন
1 min read

রেকর্ড শনাক্তের একদিন পর কক্সবাজারে ‘পজিটিভ’ ৭২ জন

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

কঠোর লকডাউনে কক্সবাজার জেলায় রোববার রেকর্ড সংখ্যক ১০৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার একদিন পর সোমবার (১৯ এপ্রিল) শনাক্ত রোগী কিছুটা কমে এসেছে। তবে তুলনামূলক ভাবে তা মোটেও কম নয়। সোমবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৭২ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। যদিও এদের মধ্যে ফলোআপ রোগী আছেন ৬ জন। তাছাড়াও অবশিষ্ট নতুন শনাক্ত হওয়া ৬৬ জন রোগীর মধ্যে ৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। জেলায় এই দিন রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসা রোগীর শতকরা হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব সুত্র মতে, এই দিন ৫৫৫ জন সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮৩ জনের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া গেছে। যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৮৭ শতাংশ।

এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৯৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৩ হাজার ৭৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সুত্র মতে, কঠোর লকডাউনে সন্দেহভাজন করোনা পরীক্ষার নমুনা কম আসায় টানা ৪ দিন ধরে নতুন ভাবে রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু ৫ দিনের মাথায় গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) করোনার নমুনা বেশি হওয়ায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যাও প্রায় ৩ গুণ বেড়ে যায়। এই দিন কক্সবাজার জেলায় রেকর্ড সংখ্যক ১০৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগী ৯৮ জন, আর পুরণো রোগী (ফলোআপ) ১০ জন। যদিও নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরাবরের মতোই কক্সবাজার সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৪৭ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছিল।

ওই দিনের নতুন শনাক্ত হওয়া ৯৮ জনের মধ্যে পার্বত্য বান্দরবান জেলার ৫ জন ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একজন রোগী ছিল। অবশিষ্ট ৯২ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।

সুত্র মতে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে রোববার (১৮ এপ্রিল) ৭৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। সেই হিসাবে ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হওয়া রোগীর শতকরা হার ছিল ১৪ দশমিক ৪৬। কিন্তু শতকরার এই হিসাব দিয়ে করোনা রোগীর আসল পরিস্থিতি বুঝা যাচ্ছে না। রোববার যেখানে কক্সবাজার জেলার ৯২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেখানে আগের শনিবার (১৭ এপ্রিল) নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা ২৩ জন। সেই হিসাবে কক্সবাজার জেলায় একদিনের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা ৩ গুণ বেশি শনাক্ত হয়।

পরদিন আজ সোমবার ৫৫৫ জনের করোনা টেষ্ট করে ৭২ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। যাতে নতুন রোগী হচ্ছেন ৬৬ জন। এদের মধ্যে আবার ৭ জন রোহিঙ্গা।

এই দিনও বরাবরের মতোই কক্সবাজার সদরে সর্বাধিক ২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়াও রামু উপজেলায় ৪ জন, উখিয়া উপজেলায় ৮ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৪ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৫ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৩ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় একজন ও মহেশখালী উপজেলায় ৫ জন এবং পার্বত্য বান্দরবান জেলায় একজন ও চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলায় একজন রোগী শনাক্ত হয়।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের একাধিক সুত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মেডিকেল কলেজ ল্যাবের সুত্র মতে, গত রোববার শনাক্ত হওয়া ১০৮ জনের মধ্যে ১০ জন আছেন ফলোআপ রোগী। নতুন শনাক্ত হওয়া ৯৮ জনের মধ্যে বান্দরবান জেলার ৫ জন ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একজন ছিলেন।

সুত্র মতে, রোববার নতুন শনাক্ত হওয়ার কক্সবাজার জেলার রোগীদের মধ্যে সর্বাধিক আছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ৪৭ জন। এছাড়াও রামু উপজেলায় ৮ জন, উখিয়া উপজেলায় ১৭ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৫ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৪ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়াও একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। তবে এ দিন পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে হওয়া গত পাঁচদিনের করোনার নমুনা টেষ্টের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আজ রোববার ৭৪৭ জনের মধ্যে ১০৮ জন, শনিবার ২৮০ জনের টেষ্টে নতুন ২৪ জন, গতকাল (শুক্রবার) ২৩৪ জনের টেষ্টে ৩১ জন, ১৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ৩৩৫ জনের টেষ্টে ৬৩ জন ও ১৪ এপ্রিল (বুধবার) ৫২১ জনের টেষ্টে ৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এই ল্যাবে প্রতি ১০০ জনের টেষ্টে আজ শনিবার নতুন রোগী ৮ দশমিক ৫৭, যা আজকের ‘পজিটিভ’ হিসাবে ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গতকাল শুক্রবার নতুন রোগী ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা ওই দিনের মোট ‘পজিটিভ’ হিসাবে ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়াও গত ১৫ এপ্রিল সেই হিসাব ছিল নতুন রোগী ১৮ দশমিক ৮১, যা দিনের মোট ‘পজিটিভ’ রোগীর হিসাবে ২০ দশমিক ৯০ শতাংশ। তার আগের দিন ১৪ এপ্রিল (বুধবার) ছিল নতুন রোগী ৯ দশমিক শূন্য দুই, যা দিনের মোট রোগীর হিসাবে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সুত্র মতে, গত শনিবার ২৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছিল। এদের মধ্যে সর্বাধিক ১৬ জন ছিল কক্সবাজার সদর উপজেলার রোগী। অন্য ২৫১ জনের রিপোর্ট এসেছে ‘নেগেটিভ’। শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। এছাড়াও ফলোআপ রোগী ছিল ৫ জন।

এছাড়াও গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ২৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩২ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছিল। এদের মধ্যে সর্বাধিক ১৫ জন ছিল কক্সবাজার সদর উপজেলার রোগী। অন্য ২০২ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে ‘নেগেটিভ’। শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে একজন ছিলেন ফলোআপ রোগী।

সুত্র মতে, গতকাল শনিবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে শনাক্ত হওয়া ২৯ জনের মধ্যে ফলোআপ রোগী আছেন ৫ জন। যাদের ফলোআপ টেষ্টেও রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। তবে এই দিন শনাক্ত হওয়া অবশিষ্ট ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। অন্য একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

আগের দিন শুক্রবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে শনাক্ত হওয়া ৩২ জনের মধ্যে ফলোআপ রোগী ছিলেন একজন। যার ফলোআপ টেষ্টেও রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছিল। তবে এই দিন শনাক্ত হওয়া অবশিষ্ট ৩১ জনের মধ্যে ৩০ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। অন্য একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

বৃহস্পতিবারের (১৫ এপ্রিল) রিপোর্টে এই পরিসংখ্যানে ওই দিনের শনাক্ত হওয়া ৭০ জনের মধ্যে ফলোআপ রোগী ছিলেন ৭ জন। যাদের ফলোআপ টেষ্টেও রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। তবে এই দিন শনাক্ত হওয়া অবশিষ্ট ৬৩ জনের মধ্যে ৫৩ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। অন্য ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

অপরদিকে বুধবার শনাক্ত হওয়া ৪৯ জন রোগীর মধ্যে দুইজন পুরনো রোগী। যাদের ফলোআপ টেষ্ট করা হয়েছে। ফলোআপ টেষ্টেও তাদের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। তবে বুধবার শনাক্ত হওয়া অবশিষ্ট ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জন কক্সবাজার জেলার রোগী। যাদের মধ্যে ৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। এছাড়া অবশিষ্ট একজন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা।

এছাড়াও মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) শনাক্ত হওয়া ৮৮ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৬ জন আগে আক্রান্ত হওয়া পুরাতন রোগীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট। এছাড়াও ১০ জন রোগী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার। তবে মঙ্গলবার করোনা শনাক্ত হওয়া অবশিষ্ট ৭২ জনের সকলেই কক্সবাজার জেলা রোগী। তাদের মধ্যে আবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ৮ জন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আজ শনিবার (১৭ এপ্রিল) একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে বরাবরের মতোই কক্সবাজার সদর উপজেলায় সর্বাধিক ১৬ জন রোগী। এছাড়াও রামু উপজেলায় একজন, উখিয়া উপজেলায় ৩ জন ও মহেশখালী উপজেলায় ৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। তবে এই দিন জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

অপরদিকে গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কক্সবাজার উপজেলায় ছিল সর্বাধিক ১৫ জন। এছাড়াও উখিয়া উপজেলায় ৬ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৫ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩ জন ও মহেশখালী উপজেলায় একজন শনাক্ত হয়েছেন। তবে এই দিন জেলার রামু, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

সুত্র মতে, আগেরদিন বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ছিল সর্বাধিক ৪১ জন। এছাড়াও রামু উপজেলায় ৪ জন, উখিয়া উপজেলায় ১১ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৩ জন ও পেকুয়া উপজেলায় একজন রোগী শনাক্ত হন। তবে এ দিন জেলার চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

তবে বুধবার (১৪ এপ্রিল) শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৮ জন, রামু উপজেলায় একজন, উখিয়া উপজেলায় ৬ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৪ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৭ জন, পেকুয়া উপজেলায় একজন, মহেশখালী উপজেলায় ৫ জন রয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা রয়েছেন একজন রোগী।

তারও আগের দিন মঙ্গলবার একদিনে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৭ জন, রামু উপজেলায় ১ জন, উখিয়া উপজেলায় ১০ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৫ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩ জন, পেকুয়া উপজেলায় একজন এবং মহেশখালী উপজেলার ৭ জন রোগীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

উল্লেখ্য, সোমবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ৭ হাজার ৫৯৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৩ হাজার ৭৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা মোট করোনা রোগীর প্রায় অর্ধেক।

অপরদিকে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৮ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

জেলায় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার মাত্র ১.২৩ শতাংশ।

সুত্র মতে, গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬ হাজার ১২৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮৪.৯৮ শতাংশ।

আক্রান্তদের মধ্যে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৭৭৮ জন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন ৬০ জন, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে রয়েছেন ৪ জন, কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া ফ্রেন্ডশীপ SARI হাসপাতালে রয়েছেন ১৬ জন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইসোলেশন সেন্টার সমুহে রয়েছেন স্থানীয় জনগণ ৫৮ জন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন ২১ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *