মিতু হত্যা মামলা
জবানবন্দি না দিলেও পার পাবেন না বাবুল আক্তার

ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দাবি, আদালতে স্ত্রী হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা প্রমাণে তাদের হাতে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। তিনি জবানবন্দি না দিলেও তদন্তে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এদিকে মিতুকে হত্যার জন্য দুটি পিস্তল খুনিদের দিয়েছিল সন্ত্রাসী এহতেশামুল হক ভোলা। গোয়েন্দা পুলিশ দুটি পিস্তল উদ্ধার করলেও ভোলার কাছ থেকে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করতে পারেনি। সে সময় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় ভোলাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে ‘পলাতক’ আছে। ওই অস্ত্রের জট খুলতে এখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পিবিআই।
মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘জবানবন্দি ছাড়াও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনেক মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। তার অনেক নজির আছে। স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। তিনি কোনোভাবেই পার পাবেন না।’
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৬ সালে মিতু হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্ত্রীকে হত্যার নেতৃত্ব দেয়া কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসাকে তিন লাখ টাকা দেন বাবুল আক্তার। বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার ও বন্ধু সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে টাকাগুলো কাজী আল মামুনের কাছে পাঠান। মামুন মুসাকে টাকাগুলো পৌঁছে দেন। বিকাশে টাকা লেনদেনের সব তথ্য পিবিআইর হাতে রয়েছে। গত ১১ মে সাইফুল ও মামুন সাক্ষী হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সোর্স ওরফে মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন বাবুল আক্তার। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া মুসার স্পষ্ট ছবি দেখানো হলেও তাকে না চেনার ভান করেন। মুসার সঙ্গে তার যোগাযোগের সব তথ্য-প্রমাণ হাজির করা হলে বাবুল আক্তার আর অস্বীকার করতে পারেননি। একপর্যায়ে স্ত্রী হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা বলেন, মিতু হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত বাবুল আক্তারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাবন্দি অন্য আরেকজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে মিতু হত্যায় বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। মিতু খুনে ব্যবহার করা দুটি অস্ত্র পলাতক আসামি ভোলা সরবরাহ করেছিল। ভোলাকে পেলেই অস্ত্রের রহস্যের সুরাহা করতে পারব।
অপরদিকে গত বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত বাবুল আক্তারের ডিভিশন দেয়া সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি শেষে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন করতে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেয়ার জন্য কারাগারে ওকালতনামা পাঠিয়েছেন বাবুলের আইনজীবী।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, আসামি বাবুল আক্তার কারাগারে আসার পর তাকে ১৪ দিনের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি।
বাবুলের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, বাবুল আক্তার এসপি হিসেবে প্রথম শ্রেণীর সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় আদালত তাকে ডিভিশন দিতে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাবুল আক্তারের জামিনের জন্য আমরা ধাপে ধাপে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওকালতনামা স্বাক্ষরের পর সেই কার্যক্রম শুরু হবে।
সুত্র : সমকাল
এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।