
আবারও আলোচনায় এসআই আকরাম ‘হত্যা’য় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা
সারাদেশ ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে নতুন করে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেনকে হত্যার অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার। তাদের অভিযোগ- আকরামের স্ত্রীর সঙ্গে বাবুলের প্রেমের সম্পর্কের জেরেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রীর পরামর্শেই যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহে ফিরছিলেন আকরাম। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কে শৈলকূপার বড়দা নামক স্থানে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এসআই আকরাম হোসেন।
আকরামকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগ নিয়ে ঘটনার পরপরই শৈলকূপা থানায় মামলা করতে যান তার পরিবারের সদস্যরা। থানা পুলিশ মামলা না নিলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হন। সে সময় ঝিনাইদহ আদালত শৈলকূপা থানাকে মামলাটি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশও দেন। কিন্তু আকরামের স্ত্রীর দায়ের করা সড়ক দুর্ঘটনার মামলার অজুহাতে আদালতের নির্দেশনা আমলে নেননি তৎকালীন ওসি হাসেম খান।
বহুদিন পর মিতু হত্যা মামলা নতুন মোড় নেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে আকরামের পরিবার। ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে নতুন করে এসআই আকরামের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে আবেদনও করেছে তারা।
সে সময় মামলা নথিভুক্ত না করা প্রসঙ্গে শৈলকূপা থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি অনেকদিন আগের। নথিপত্র পর্যালোচনা করে পরে জানানো হবে।
এসআই আকরামের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের আবেদন বিষয়ে ঝিনাইদহ পিবিআইর পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, আকরামের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। পিবিআই এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভিনের অভিযোগ- আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বশির ওরফে বহ্নির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বাবুল আক্তারের। এ নিয়ে বহ্নি ও আকরামের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো।

জান্নাত আরা পারভিন বলেন, খুলনায় বাবুল আক্তারের বাবা পুলিশে এবং বহ্নির বাবা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিআরডিবি) চাকরি করতেন এবং পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেখান থেকে বাবুল আর বহ্নির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠ। ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তার ভাই আকরামের সঙ্গে বহ্নির বিয়ে হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামে খুন হওয়া মাহমুদা খানম মিতুকে বিয়ে করেন বাবুল আক্তার।
বিয়ের পরও বাবুল আর বহ্নির মধ্যে যোগাযোগ ছিল। আকরামের পরিবারের ধারণা, ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এসআই আকরাম যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে বহ্নি আর বাবুল সন্ত্রাসী ভাড়া করে রাখেন। এরপর ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় মহাসড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় আকরামকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি মারা যান আকরাম।
জান্নাত আরা পারভিনের অভিযোগ- আকরামের স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। সেদিন আকরামের শ্বশুর জামাইয়ের জানাজায় অংশ না নিয়ে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাবুল আক্তারের মাগুরার বাড়িতে ওঠেন। পরে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে এসআই আকরামের লাশ উত্তোলন করার পর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই সময় বাবুল আক্তার শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ময়নাতদন্তের খবর পেয়ে বাবুল আক্তার তড়িঘড়ি এক মাসের ছুটিতে দেশে ফিরে এসে প্রভাব খাটিয়ে আকরামের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেন।
আকরাম হোসেনের ভগ্নিপতি জেএম রাশিদুল আলম বলেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা বললেও পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা এখন ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।