
যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল: মেয়ে কিভাবে ভারতে জানেন না বাবা!
ডেস্ক রিপোর্ট
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
ভারতে যে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তিনি প্রায় এক বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিলেন। শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর কখনও কথা হয়নি পরিবারের সঙ্গে। এছাড়া মেয়ে কীভাবে ভারতে গেলেন, সেটাও জানেন না তার বাবা!
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা পেশায় লেবুর সরবত বিক্রেতা। বসবাস করেন মগবাজার এলাকায়। শুক্রবার তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে মেয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই তার। শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছেড়েছিলেন মেয়ে। এরপর কখনও কথা হয়নি। দুই থেকে তিনদিন মেয়েকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কথা প্রথমে লোকমুখে শোনেন। সেটা দেখার পর আর স্থির থাকতে পারছেন না।
ওই তরুণীর বাবা বলেন, ‘টিকটক বাবু নামে কারও সঙ্গে আমার মেয়ের পরিচয় রয়েছে- এটাও জানা ছিল না। মেয়ে কীভাবে ভারতে গেল তাও জানি না।’
এতদিন ধরে খোঁজ না পেলেও কেন জিডি করেননি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঝামেলা এড়াতে পুলিশের কাছে যাইনি।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধও হয়েছেন। এছাড়া যৌন নিপীড়নের শিকার ওই তরুণীকেও কেরালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাতে এক টুইট বার্তায় আসাম পুলিশ জানায়, নির্যাতনের শিকার তরুণী ও এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয়জন বাংলাদেশি নাগরিক।
ভিডিওর সূত্র ধরে এরইমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি ও মানবপাচার আইনে মামলাটি করেন। মামলায় একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামি হলেন মগবাজারের নয়াটোলা বাসিন্দা রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক বাবু। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাবুর মা-বাবা নিশ্চিত হয়েছেন- ভয়ঙ্কর এ ঘটনার সঙ্গে তাদের ছেলে সম্পৃক্ত।
এদিকে মামলায় বাদী বলেন, তার মেয়েকে দুবাইয়ে পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে যান টিকটক হৃদয়। এরপর আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন। টিকটক বাবু ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাসা মগবাজারে একই এলাকায়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা আমরা জেনেছি। পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবির মাধ্যমে তাদের দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া যারা টিকটকের মডেল বানানোর কথা বলে তরুণীদের ফাঁদে ফেলছে, তাদের শনাক্ত করার কাজও শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের আরেকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, তারা এরইমধ্যে তথ্য পেয়েছেন টিকটকের মডেল বানানোর কথা বলে অন্তত ১১ জন তরুণীকে বিভিন্ন সময় ভারতে নিয়েছে একটি চক্র। বৈধ পাসপোর্টে, না-কি অবৈধ পথে তারা ওই দেশ যান- এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে মগবাজারে টিকটক বাবু হিসেবে পরিচিত রিফাদুল ইসলাম হৃদয়ের খপ্পড়ে একাধিক তরুণী পড়ে এরইমধ্যে ভারতে গেছেন। সেখানে একটি পতিতালয়ে যৌনকর্মী হিসেবে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে অবাধ্য হওয়া ও লেনদেন নিয়ে বিরোধের জের ধরেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয়।
তরুণীকে বিভৎস কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভারতের পুলিশ জানায়, ২২ বছরের ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়।