ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা নিয়ে সিনেমায় বিতর্ক, ক্ষুব্ধ মুসলিম সমাজ

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা নিয়ে সিনেমায় বিতর্ক, ক্ষুব্ধ মুসলিম সমাজ

বিশ্ব ডেস্ক
বিসিবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদের ওপর জঙ্গি হামলার ওপর নির্মীয়মাণ একটি চলচ্চিত্র নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে ছবিটির প্রযোজক ছবি তৈরির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

‘দে আর আস’ নামের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রটির মূল ফোকাস ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদের ওপর ২০১৯ সালের সন্ত্রাসি হামলা নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন কীভাবে মোকাবেলা করেছিলেন সেটা নিয়ে।

দেশটির মুসলিম সমাজ যারা এই হামলার শিকার হয়েছিলেন, তারা ছবিটি নিয়ে সমালোচনা করছেন এই বলে যে ছবিটিতে হামলার শিকার মুসলমান সম্প্রদায়কে ফোকাসে রাখা হয়নি। এই ছবির প্লটে তারা গৌণ, মুখ্য হলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আর্ডেন। এতে তাকে একজন শ্বেতাঙ্গ ত্রাতার ভূমিকায় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ফিলিপা ক্যাম্পবেল ছবিটিতে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন এই ছবি অনেকের মনোকষ্টের কারণ হতে পারে সেটা তিনি আগে বুঝতে পারেননি।

তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি এই ছবি নিয়ে প্রকাশ করা উদ্বেগের কথা শুনেছি এবং মানুষের মতামতের শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছি।

ফিলিপা ক্যাম্পবেল বলেন, মানুষের মনে ১৫ মার্চ ২০১৯এর ওই মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষত এখনও শুকায়নি। এখনই এই ঘটনা নিয়ে ছবি করার সময় যে আসেনি এ বিষয়ে আমি একমত এবং মানুষের মনে আঘাত লাগতে পারে- এমন কোন প্রকল্পের সাথে আমি জড়িত থাকতে চাই না।

নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫১ জন মানুষ।

তবে তিনি এই ছবির কাজ থেকে সরে দাঁড়ালেও, অ্যামেরিকান এই হলিউড ছবি তৈরির পুরো প্রকল্পটি যে বাতিল হয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়।

বেশি তাড়াতাাড়ি
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্ডেন সোমবার বলেন, ছবিটি তৈরির জন্য সঠিক সময় এখনও আসেনি এবং ছবিটির ফোকাস নির্বাচন ভুল হয়েছে।

তিনি টিভিএনজেড স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, ঘটনার পর বেশি তাড়াতাড়ি এই ছবি করা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষের জন্য এর ক্ষত এখনও শুকায়নি।

এই ঘটনার সাথে জড়িত অনেক কাহিনি রয়েছে যা তুলে ধরা যায়। আমি মনে করি না- আমার গল্প এখানে প্রধান।

ওই হামলার সময় আর্ডেন যে সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রের প্রস্তাবিত নামটিও নেয়া হয়েছে হামলার ঘটনার পর তার দেয়া একটি ভাষণ থেকে।

মুসলমান সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ
তবে নিউজিল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ছবিটির মূল চরিত্র হিসাবে মিজ আর্ডেনকে বেছে নেয়ার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।

আয়া আল-উমারির ভাই হুসেইন ওই হামলায় প্রাণ হারান। তিনি বলছেন, আর্ডেনের কাহিনি এখানে বলার মত কোন গল্প নয়।

ন্যাশানাল ইসলামিক ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ বাতিল করার জন্য একটি আবেদনে ইতোমধ্যেই প্রায় ৬০ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

তারা বলছেন, এই চলচ্চিত্রে হতাহত ও যারা প্রাণে বেঁচে যান তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে এবং এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে সব দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর ভূমিকার ওপর।

এই পিটিশিনে আরও বলা হয়েছে, এই ছবিটি নিয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে কোনরকম পরামর্শ করা হয়নি।

ক্রাইস্টচার্চে যেখানে এই হামলা হয়েছিল সেই শহরের মেয়র বলেছেন, চলচ্চিত্রের ক্রুদের তার শহরে স্বাগত জানানো হবে না।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে মেয়র লিয়ান ডিয়েল বলেন, আমি খুবই ক্ষুব্ধ, কারণ তারা মনে করছে এভাবে তাদের এই ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের মধ্য-বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার চলচ্চিত্র তারকা রোজ বার্নকে।

অভিনেত্রী রোজ বার্নও যাতে এই ছবির কাজ না করেন তার জন্য যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাতে তার প্রতিক্রিয়া তিনি এখনও জানাননি।

হত্যাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট
অস্ট্রেলিয়ার স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টকে এই হামলার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, যে সাজায় প্যারোলের সুযোগ রাখা হয়নি। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হলো। হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।

ব্রেন্টন ট্যারান্ট ১৫ মার্চ আল-নূর মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের ওপর গুলি চালান।

গুলি করার দৃশ্য তিনি মাথায় পরা ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি ফেসবুক লাইভে প্রচার করেন।

আল-নূর মসিজদে হামলা চালানোর পর ট্যারান্ট গাড়ি চালিয়ে লিনউড ইসলামিক সেন্টারে যান এবং সেখানে বাইরে দাঁড়ানো লোকজনের ওপর এবং জানালা লক্ষ্য করে গুলি চালান।

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম সন্ত্রাসী হামলায় কারো দোষী সাব্যস্ত হবার ঘটনা। ওই হত্যাযজ্ঞের পর নিউজিল্যান্ডে বন্দুক রাখার আইন সংস্কার করা হয়।

এই পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।