পরীমনি ও পুলিশ, আবু ত্ব-হা আর সাকিব আল-হাসান নিয়ে নানা প্রশ্ন
1 min read

পরীমনি ও পুলিশ, আবু ত্ব-হা আর সাকিব আল-হাসান নিয়ে নানা প্রশ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট
কক্সবাজার ভিশন ডটকম

চলতি সপ্তাহে আমাদের সামাজিক মাধ্যমে টকিং পয়েন্ট ছিল বলতে গেলে একটি বিষয়, আর তা হল একজন ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অভিনেত্রী পরীমনির যৌন হামলা আর হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ।

সে বিষয়ে চিঠি দিয়ে আজ শুরু করছি, প্রথমে লিখেছেন ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসুম বিল্লাহ।

‘কিছুদিন ধরে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি, যিনি কিনা কয়দিন আগে ফোর্বস ম্যাগাজিনে নিজের জায়গা করেছেন, তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।’

‘এই ভাবে চলতে থাকলে আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো কোন পরিবারের মেয়ে আসতে সাহস করবে না। সুতরাং এখনি এই ব্যবসায়ী নামধারী মাফিয়া গুলোকে রুখে দিতে হবে, না হলে দেশের সুনাম নষ্ট হবে, মানুষের সম্মানহানি হবে।’

সিনেমা এবং বিনোদন শিল্পে নারী শিল্পীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করেছে। কাজের ভেতরে যৌন হয়রানির অনেক কথা শোনা যায়, কিন্তু কাজ হারানোর ভয়ে বা চক্ষু লজ্জার জন্য বেশির ভাগ ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন না।

পরীমনির ঘটনা কাজের বাইরে হলেও, চিত্রনায়িকা হিসেবে তার পরিচিতি তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলেই মনে হয়। অনেক ব্যবসায়ী হয়তো অর্থের দাপটে নারী শিল্পীদের পণ্য হিসেবে দেখেন, এবং এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং বিচার হলে এই মনোভাব বদলানো সম্ভব হবে।

কিন্তু নারী শিল্পীকে ভিন্ন চোখে দেখছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক।

‘নায়িকা পরীমনির ক্ষেত্রে প্রশাসন সফল হলেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের পর এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত প্রধান আসামি। এমন কোন ঘটনা নয় যে, মেয়েটি রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিল বা সবাই মিলে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে।’

‘এত রাতে কোন ভাল সামাজিক পরিবারের মেয়েরা কোন ভাবেই নিজের নিরাপত্তা বিবেচনা করে ক্লাবে যায় না; অতএব বিচার চাইতেও একটা সুন্দর সামাজিক পথ থাকে, কিন্তু এখানে তা পাওয়া যায়নি। তবুও দেশের প্রচলিত আইনে একজন নারী হিসেবে বিচার পাওয়ার অধিকার তিনি রাখেন।’

নারী হিসেবে পরীমনি শুধু বিচার পাবার অধিকার রাখেন, তাই নয়। যৌন হামলা এবং হয়রানি থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার তার মত সকল নারীর রয়েছে।

তিনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী, তিনি কোথায়, কখন কার সাথে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার তার আছে। কিন্তু আপনি যে মন্তব্য করেছেন, ‘ভাল সামাজিক পরিবারের মেয়েরা ক্লাবে যায় না’, সেটা তার অধিকারের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে বলে আমার মনে হয়।

আপনি আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু আমার মতে এই বাক্যে এক ধরনের নারী বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে, যেটা দুঃখজনক।

পরীমনি অভিযোগ করেছেন যে তার ওপর হামলা হয়েছে, এখন পুলিশের উচিত তাকে বিশ্বাস করে এ’ঘটনার তদন্ত করা। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তর বিচার হওয়া উচিত।

কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন, কার সাথে ছিলেন এসব প্রসঙ্গ টানার মানে হচ্ছে আসল অপরাধ এবং অপরাধীকে আড়াল করে রাখা। আপনি নিশ্চয়ই সেটা চাইছেন না?

পুলিশ বনাম ভিকটিম
পরীমনির ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেফতারসহ পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা হয়েছে ঘটনার অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যেমন বলছেন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শামীম উদ্দিন শ্যামল।

‘বাংলাদেশে ভিকটিমদের একটা অভিযোগ করতে দেখা যায় যে, থানায় মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা নেয় না। সেটা গুম, খুন কিংবা ধর্ষণের হোক না কেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রতি এমন সংস্কৃতি দেখে আমরা অভ্যস্ত হলেও ইদানিং সবক্ষেত্রেই তা দেখা যাচ্ছে, যা হতাশার পাশাপাশি অবাকও করছে।’

‘যখন কোন ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হচ্ছে এবং মিডিয়া কাভার করছে ঠিক তখনই শুনা যায় ভিকটিম কিংবা তার স্বজন একাধিক থানায় ধর্না দিয়েও অভিযোগ বা মামলা করতে পারেনি। বরং অভিযোগ নেয়ার পরিবর্তে পুলিশ অপরাধ এলাকার সীমানা নির্ধারণে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

‘এর কারণ কী? এটা তো পুলিশের এক ভয়ংকর সংস্কৃতি! ব্যাপারটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত।’

সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে পুলিশ অপরাধের ধরন এবং মাত্রা দেখে কাজ করে না। মনে হয়, উপর মহলের চাপের ওপর নির্ভর করে তারা কত দ্রুত গতিতে এ্যাকশন নেবে, বা আদৌ নেবে কিনা।

পরীমনির ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে তাদের মধ্যে গড়িমসি ছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে আলোড়নের কারণে বা অন্য কোন কারণে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে।

অভিযোগ আসা মাত্র ভিকটিমকে সহানুভূতির চোখে দেখে, তাকে বিশ্বাস করে তদন্ত শুরু করার সংস্কৃতি যত দিন না শুরু হবে, তত দিন আইন সবার জন্য সমান হবে না।

বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরও পুলিশের এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি কেন?

আনভীর আর হালদার কোথায়?
একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।

‘পুলিশের ত্বরিতগতির সর্ব সাম্প্রতিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো এবং অভিযুক্তদের দ্রুতগতিতে ম্যাজিকের মতো আইনের আওতায় নিয়ে আসা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ ধরনের যেকোনো অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এমন কর্মতৎপরতা দেখাবে এটাই সকলের কাম্য ও প্রত্যাশা।’

‘কিন্তু সম্প্রতি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা হওয়ার পরও আমাদের পুলিশের এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আর্থিক খাতের বহু কেলেঙ্কারির হোতা পি কে হালদারের ক্ষেত্রেও পুলিশের এমন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।’

‘আমি মনে করি, পুলিশ যদি এভাবে আইনকে তাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করে, তবে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই কমে যাবে।’

একটি কথা আপনি ঠিকই বলেছেন জিল্লুর রহমান, পুলিশ যদি আইন বেছে বেছে প্রয়োগ করে তাহলে সেই আইন এবং পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। আইনের শাসন মানেই হচ্ছে আইন সবার বেলায় সমান ভাবে প্রযোজ্য হবে।

তবে এখানে ম্যাজিক কিছু ছিল বলে আমার মনে হয় না। কারণ, পরীমনির অভিযোগ ছিল পুলিশ তার কথায় কান দেয়নি। যখন তিনি সামাজিক মাধ্যমে তার কথা তুলে ধরলেন, তা নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক শুরু হল, শুধু তখনই পুলিশ নড়ে-চড়ে বসলো।

কিন্তু তারপরও, সায়েম সোবহান আনবির বা পি কে হালদারকে আদালতে নাগালের বাইরে রয়ে গেছে, সেটা অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যর্থতা কি তাদের অক্ষমতা বা অদক্ষতা প্রমাণ করছে? নাকি বর্তমান বাংলাদেশি সমাজে বিত্তশালী লোকদের ক্ষমতার প্রদর্শন করছে? হয় তো দুটোই।

আবু ত্ব-হা আদনান খবরেও নিখোঁজ
যাই হোক, অনেক পাঠক-শ্রোতা অভিযোগ করছেন, যে পরীমনির ঘটনা নিয়ে মিডিয়া অনেক আগ্রহ দেখালেও, নিখোঁজ হওয়া একজন ইসলামিক বক্তাকে নিয়ে তেমন উৎসাহ নেই। লিখেছেন রাজশাহী থেকে মোহাম্মদ ফাতিউর রহমান রাকিব।

‘গত ১৪ তারিখে প্রধান শিরোনাম ছিল আলোচিত বাংলাদেশি নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে। খুব ফলাও করে এই খবর প্রচার কর হয় । কিন্তু আরো কিছু খবর আছে যা বিবিসির ৩০ মিনিটের ভিতরে ১০ সেকেন্ডের জায়গাও হয়না।’

‘যেমন, চারদিনেও খোঁজ মেলেনি ‘ইসলামী বক্তা’ মুহাম্মদ আদনানের। ওনার লাখ লাখ ফলোয়ার নেই, উনি সেলেব্রিটি নন। তাই কি তার নিখোঁজের সংবাদটা এক কোনায় রয়ে যাবে?’

মুহাম্মদ আদনানের নিখোঁজ হবার খবর বিবিসি বাংলায় যায়নি, সে কথা ঠিক না জিল্লুর রহমান। এটা ঠিক যে ১৪ তারিখে রেডিওতে কিছু ছিল না, কিন্তু আদনানের খবর আমাদের ওয়েবসাইটে তার আগের দিন ১৩ তারিখে শিরোনাম হয়েছিল। আর ১৫ তারিখে রেডিওতেও রিপোর্ট করা হয়েছে।

রিপোর্টগুলো পড়ে বিবিসিকে প্রশংসা করে লিখেছেন ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে জহিন মুমতাহিনা।

‘বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় ১৫ জুন ২০২১ তারিখ “আবু ত্ব-হা আদনান: ইসলামী বক্তা নিখোঁজ হবার পাঁচদিন পরও পুলিশ কোন হদিস করতে পারছে না” শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়লাম।’

”যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যেমন দরকার, ঠিক তেমনিভাবে যে ভিকটিম বা অপরাধী তারও আইনের আওতায় সুবিচার পাওয়ার অধিকার আছে কিন্তু এ ধরনের নিরুদ্দেশ করা কোন ক্রমেই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।’

‘যেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আবু ত্ব-হা আদনানের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বিবিসি বাংলার সময়োপযোগী প্রতিবেদনটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।’

‘এ ধরনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন কোন বিষয় নয়, যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু এর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা উপলব্ধি করতে পারে। বিবিসি বাংলাকে ধন্যবাদ মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে সময়োপযোগী প্রতিবেদনটি প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য।’

‘একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অনুরোধ তাকে দ্রুত খোঁজ করে বের করার জন্য।’

আপনাকেও ধন্যবাদ জহিন মুমতাহিনাহ। সত্যি কথা বলতে, কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হবার ঘটনা সব সময় আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না, কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ গুম হয়ে যাবার প্রবণতা বেশ উদ্বেগজনক। তাই এ’ধরনের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করা উচিত বলে আমাদের মনে হয়। (এডিটার’স মেইলবক্স প্রকাশ করার দিন, অর্থাৎ শুক্রবার, ১৮ জুন খবর আসে আদনানকে পুলিশ রংপুরে খুঁজে পেয়েছে)।

আবার সাকিব আল-হাসান
এবার আসি বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী তারকা এবং ক্রিকেট ফ্যানদের মধ্যমণি সাকিব আল-হাসানকে নিয়ে সর্বশেষ বিতর্কে। তবে তাকে নিয়ে বিতর্ক বলা হয়তো ঠিক হচ্ছে না, কারণ ঘটনা তিনিই ঘটিয়েছেন, অন্য কেউ কিছু ঘটিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়নি। যাই হোক, বিষয়টি অন্য ভাবে দেখছেন ঢাকা থেকে তাঞ্জিলুর রহমান।

‘সাকিবের স্টাম্পে লাথি মারা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সাকিবকে নিয়েই আরেক বিতর্ক বলে তুলে ধরা হচ্ছে।’

‘তবে সে ঘটনার পর এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছে যে, সাকিব এক বিতর্কিত কাণ্ডের মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক বিতর্কিত দিক সামনে এনেছেন যা গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় ছিল, খেলোয়াড়েরা নানা সময় এর প্রতিবাদ মাঠ ও মাঠের বাইরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বা অন্য কোনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যার ফলাফল ছিল শূন্য।’

‘এখন দেখা যাক, সাকিবের এই নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ এই বিতর্কিত বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোন পরিবর্তন করতে পারে কিনা।’

আমি বুঝতে পারছি আপনি বাংলাদেশে নিম্নমানের আম্পায়ারিং-এর দিকে ইঙ্গিত করছেন তাঞ্জিলুর রহমান। বাংলাদেশের আম্পায়ারিং যে নিম্নমানের, সেটা কোন গোপন কথা না। এবং কোন রকম প্রতিবাদ করে সেটা বদলানো যাবে বলে আমার মনে হয় না।

কারণ, এখানে দৃশ্যতই দক্ষতার অভাব আছে। তাছাড়া, বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রশাসন কি আসলেই পেশাদারি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা হয়? যদি হত, তাহলে তার ছাপ আপনি নিশ্চয়ই আম্পায়ারিং এর মানেও দেখতেন।

কিন্তু আমি বিষয়টিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে দেখছি না, পুরো ঘটনাকে খেলার মাঠে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়নি আমার কাছে।

সাকিব একটা বড় দলের অধিনায়ক, দেশের সবচেয়ে প্রতিভাধর ক্রিকেটার, তার দিকে তরুণ ক্রিকেটাররা তাকিয়ে থাকে খেলা এবং পেশাদারি আচরণ শেখার জন্য। তিনি যা করেছেন, তার মধ্যে আর যাই থাকুক, পেশাদারিত্ব ছিল না।

বিসিবি-র বেহাল অবস্থা
একই বিষয়ে আরো লিখেছেন ঢাকার মিরপুর থেকে মোহাম্মেদ রুবেল মিয়ান।

‘সাকিব আল-হাসান খেলার মাঠে বরাবরই স্পষ্টভাষী। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আইপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএল, পিএসএল, এসএলপিল সহ সারা দুনিয়ায় নানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তিনি খেলেছেন।’

‘অভিজ্ঞতার ঝুলিও ভরিয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। তাই বলে ঢাকা প্রেমিয়ার লিগ-এ সম্প্রতি তিনি যে আচরণ করলেন তা আমার মোটেও ভালো লাগে নাই।’

‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদিও অত্যন্ত ধনী, তারপরও আপনি যদি বাংলাদেশের ক্রিকেট অবকাঠামো দেখেন তাহলে মাথায় হাত দিবেন। এক মিরপুর ছাড়া অন্য ভেন্যুর অবস্থা বিসিবি জানে?’

‘বিপিএল, ডিবিএলসহ সকল লিগে অনেক সময় জাতীয় দলের খেলাতেও বাংলাদেশের টেলিভিশন-রেডিওর সম্প্রচার মান, ধারাভাষ্যর মান, খেলোয়াড়দের গিয়ার ইত্যাদি অতি নিম্নমানের।’

‘আগেই যেটা বলেছি, আমার মতে সাকিব আল-হাসানের আচরণ ছিল অত্যন্ত অপেশাদারি এবং সবাই তার মত জাতীয় তারকার কাছ থেকে অনেক বিচক্ষণ আচরণ আশা করে।’

‘তবে আপনি ক্রিকেট অবকাঠামোর কথা বললেন, আর সব কিছুর নিম্ন মানের কথা বললেন। এখন, ক্রিকেটের প্রশাসনিক অবকাঠামো যদি অপেশাদারি হয় এবং সব কিছু যদি নিম্ন মানের হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক মানের আম্পায়ারিং আশা করা কি বাস্তবসম্মত?’

আমার তো মনে হয়, সর্বস্তরে ক্রিকেটের মান উন্নয়ন করার জন্য প্রথমে পেশাদারি অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

বিবিসিও দোষী?
সাকিবের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা বিবিসি বাংলা যেভাবে কাভার করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বরিশালের কাউনিয়া থেকে মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।

‘সাকিবের স্টাম্প উপড়ে ফেলার ঘটনা নিয়ে বিবিসি বাংলা বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করেছে। উক্ত ঘটনায় সাকিব আল হাসান ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তার উপর শাস্তিও আরোপ করা হয়েছে।’

‘মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নানা অভিযোগ অনিয়মের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। তবে আমি লক্ষ্য করেছি বিবিসির প্রতিবেদনগুলোতে বিষয়টি একদম আলোচনা করা হয়নি।’

‘এর কারণ কী? বিবিসি কি অভিযোগ অনিয়ম থেকে দূরে থাকতে চায়? নাকি শ্রোতা পাঠকের চাহিদামত উপরোক্ত বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট প্রচারের ব্যবস্থা করবে?’

যেখানে কোন প্রমাণ ছাড়া দুর্নীতির কথা বলা হয়, সেখান থেকে আমরা সাধারণত দূরেই থাকি। আমরা এমন কোন রিপোর্ট করতে পারি না, যাতে কারো মানহানি হয়।

দুর্নীতির প্রমাণ হাতে পেলে আমরা অবশ্যই সেটা নিয়ে প্রতিবেদন করবো। আর সাকিবের ঘটনাটি ছিল খেলার মাঠে একজন সিনিয়র প্লেয়ার কর্তৃক উশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে। আমাদের রিপোর্টিং সেই মূল ঘটনা নিয়েই করা হয়েছিল।

আর এই মূল ঘটনা নিয়ে সাকিব ভক্তদের অনেকেই মর্মাহত, যেমন বলছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:

‘সাকিব আল হাসানের আচারণ তার ভক্তদের মর্মাহত করেছে বলেই আমার বিশ্বাস। সাকিবের ক্রিড়া নৈপুণ্য আমাদের মুগ্ধ করে একথা ঠিক, কিন্তু তার এমন আচারণতো আমরা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারি না।’

‘সাকিব তার রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আরও অনেক কিছু বাংলাদেশকে দিতে পারতেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিৎ সাকিব আল হাসানকে মাঠে সংযত থাকতে বাধ্য করা।’

ক্রীড়া জগতে আমরা এমনটা দেখেছি, অত্যন্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড় কিছুটা মেজাজি হন, যেমন টেনিসে জন ম্যাকেনরো। তবে সেগুলো ব্যতিক্রম, আর দল-ভিত্তিক খেলায় এরকম উশৃঙ্খলতা কোথাও বরদাশত করা হয় না, সে যত দামী খেলোয়াড়ই হোক না কেন। হয়তো এই ঘটনার পর সাকিব নিজেও উপলব্ধি করবেন যে, দলের স্বার্থেই তাকে সংযত হতে হবে।

তবে ক্রিকেটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পৃথিবীতে আছে, যেমন করোনাভাইরাস আর তার কারণে বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউন। কিন্তু সেখানেও আছে অসন্তোষ, প্রতিবাদ।

লকডাউন নিয়ে ঝালকাঠির ঝাল
বাংলাদেশে সেরকম কোন প্রতিবাদ চোখে পড়ে না, তবে অনেকের মনেই ক্ষোভ রয়েছে। যেমন ঝাল ঝাড়ছেন ঝালকাঠির তালগাছিয়া থেকে শহিদুল ইসলাম।

‘লকডাউনের নামে সামাজিক দূরত্বের জন্য যেভাবে আমাদের দেশে নির্দেশনা দেয়া হয়, তা স্বাস্থ্যবিধির জন্য কতটা বাস্তব সম্মত? বাসে উঠলে দুই সিটে একজন করে বসার নির্দেশ, এবং পাবলিককে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি দিতে হয়।’

‘দেখা যায়, সিট খালি হলেই সেই সিটে অন্য আরেকজন বসার আগে কোনো ধরনের স্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়াই বসে পড়েন।’

‘তাছাড়া, স্কুল কলেজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ, আমার প্রশ্ন, স্কুল কলেজে গেলে যদি করোনা বেড়েই যায়, তাহলে তারা কি হাট বাজারে যায় না? লকডাউনের নামে এসব অত্যাচার করার কারণ কী?’

সব দেশেই লকডাউন দেয়া হয়েছে যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামানো যায়। অর্থাৎ মানুষের জীবন রক্ষা করাই লকডাউনের উদ্দেশ্য।

কিন্তু পাবলিক যদি নিজ উদ্যোগে বিধি-নিষেধ না মানে, তাহলে লকডাউনের সেই লক্ষ্য অর্জন হবে না।

অন্য দিকে, লকডাউন সফল করার জন্য সরকারকেও বিধি-নিষেধ প্রয়োগ করতে হবে এবং একই সাথে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের আর্থিক সাহায্য দেয়া উচিত। সেটা না করতে পারলে লকডাউন ভেঙ্গে পড়বে কারণ মানুষ জীবিকার তাগিতেই বাইরে বেরিয়ে পড়বে।

ডানপন্থী না বাম?
ভিন্ন বিষয়ে ছোট একটি চিঠি লিখেছেন রংপুর থেকে ফাহমিদ আহমেদ।

‘বিবিসি অনেক সময় নেতা বা দলকে ডান পন্থী বা বাম পন্থী বলে । এর মানে কী? আবার উগ্র ডান বা বাম পন্থী মানেই বা কী?’

রাজনৈতিক দলগুলোকে সাধারণত এভাবে ডাকা হয় মি. আহমেদ, যাতে তাদের মতাদর্শ মোটা দাগে বোঝানো যায়।

এখানে, ডানপন্থী বলতে আমরা বোঝাই যারা সামাজিক নীতিতে রক্ষণশীল এবং অর্থনৈতিক নীতিতে পুঁজিবাদী।

ধর্ম-ভিত্তিক দলগুলোকেও ডানপন্থী বলা হয় যেহেতু তারা রক্ষণশীল হয়। যে দলগুলো সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদারপন্থী, অর্থনীতিতে সামাজিক সুবিচারের কথা বলে বা সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করে, তাদের বামপন্থী বলা হয়।

যেসব ডানপন্থী দল অত্যন্ত কট্টর হয়, যেমন ধর্মীয় মৌলবাদী বা সামাজিক দিক থেকে কট্টর রক্ষণশীল, তাদের উগ্র ডানপন্থী বলা হয়। তারা অনেক সময় বর্ণবাদী বা সাম্প্রদায়িক হয়ে থাকে আর ধর্ম, জাতিগত বিদ্বেষ ইত্যাদি পুঁজি করে রাজনীতি করে।

আর যেসব বামপন্থী দল গণতান্ত্রিক রীতির বাইরে গিয়ে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখতে চায় এবং রাজনীতিতেও সহনশীল হয় না, তাদেরকে সাধারণত উগ্র বামপন্থী বলা হয়।

আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ভিডিও নিয়ে লিখেছেন, সাতক্ষীরার টেকাকাশিপুর থেকে মুঈন হুসাইন।

‘আপনাদের ফেসবুক পাতায় পোস্ট করা একটি অতি চমৎকার ভিডিও দেখলাম। যখন আমরা আমাদের সমাজের প্রায় সবখানে হতাশার সংবাদ দেখে বড় বেশি ক্লান্ত হয়ে যাই, ঠিক তখনই হঠাৎ নতুন করে আশার বাণী শোনাতে থাকে সুস্মিতা দাসেরা।’

‘তাঁদের মত মহান মনের মানুষদের ভীষণ প্রয়োজন বর্তমান পৃথিবীতে! তবে, তাঁর কথা শুনে আমি খুব কষ্টও পেয়েছি এবং একজন মুসলিম হিসাবে অত্যন্ত লজ্জিতও।’

‘কারণ, স্বেচ্ছায় তাঁর শরীর থেকে যখন কোন একদিন একজন বয়স্ক ও পুরুষ মুসলমান ব্যক্তিকে প্রয়োজনে রক্ত দিতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি হিন্দু ধর্মের হওয়ার কারণে ঐ লোকটি তা প্রত্যাখ্যান করেন।’

‘সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তাঁর এই সফলতার যাত্রা এবং মানুষের মানবিক উপকার করার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উনার কথা গুলো সত্যই আমার মনকে দোলা দিয়ে গিয়েছে। আমি প্রচুর অনুপ্রেরণা পেয়েছি তাঁর অনুসরণীয় জীবন থেকে।’

আপনাকে ধন্যবাদ হুসাইন। সুস্মিতা দাসকে নিয়ে আমাদের ভিডিও আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমাদেরও ভাল লাগলো।

সব শেষে, আমাদের ওয়েবসাইটে চিঠি-পত্রের পাতা প্রকাশ করা নিয়ে লিখেছেন খুলনার কপিলমুনি থেকে মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পী।

‘বিবিসি বাংলা এডিটার’স মেইল বক্সে নানা বিষয় নিয়ে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। আমি ঠিক বুঝতে পারি না কী কারণে চিঠি পত্রের জবাব বিবিসি বাংলার রেডিতে প্রচার হবার অনেক সময় পর আমরা অনলাইনে দেখতে পাই।’

তার কী কারণ রয়েছে? যে সময় শ্রোতাদের মেইলগুলি পড়া হয়, সে সময় কি বিবিসি বাংলা অনলাইনে এডিটর মেইলবক্স প্রকাশ করা সম্ভব নয় কি?’

চিঠি-পত্রের আসর মূলত রেডিওর জন্যই রেকর্ড করা হয়, এবং তা পরেরদিন অনলাইনে গোটা সপ্তাহের জন্য প্রকাশ করা হয়। যেহেতু স্ক্রিপ্ট রেডিওতে সম্প্রচারের দিন তৈরি করা হয়, তাই একই দিন অনলাইনের জন্য সেটা প্রস্তুত করা সম্ভব না।
সুত্র : বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *